যত দিন যাচ্ছে ততই যেন আরো অলস হয়ে যাচ্ছি। না পড়তে ভালো লাগে না খেলতে ভালো লাগে। সারাদিন শুধু এই মোবাইল নিয়েই দিন কাটে। সত্যিই আর ভালো লাগছে না। কিন্তু কি বা করবো বদলাতে তো চাই কিন্তু কোন উপায় খুজে পাচ্ছি না। যদি আপনার সমস্যাটাও এই একই হয় তাহলে এই পোস্টটা আপনার জন্য।এই পোস্টটাতেই আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আজ আমি আপনাদের সাথে সেয়ার করবো অলসতা আসলে ঠিক কি? এটা কি শুধু মাত্র আমাদের মস্তেষ্কের ছলনা নাকি কোনে জিন গত ব্যপার? আর তারপর এই পোস্ট টা তে আমি অলসতা দূর করার জন্য এমন কিছু স্মার্ট আইডিয়া সেয়ার করবো যেগুলো অভ্যাস করা অত্যন্ত সহজ কিন্তু সেগুলো অসম্ভব উপকারি। আশা করি সম্পূর্ন পোস্টটা পোরবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
অলসতা কি?
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন জগতে বসবাস করতেন তখন তাদের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না যে পরবর্তী খাবার টা ঠিক কোথায় এবং কোন সময় পাবেন। এরপর ঠিক কখন তাদের উপর কোনো জীবজন্তু আক্রমন করতে চলেছে। তাই তারা অলসতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের শক্তিকে সঞ্চয় করে রাখতেন। যাতে দরকারের সময় পরে তাদের শক্তির অভাব না পরে। এই কারনে তারা মোটামটি তাদের ৮০% সময় অলসতার সাথে এবং২০% সময় একটিভ থাকার চেষ্টা করতেন। তাদের থেকে বির্বতিত হয়ে এখন আমরা হয়েছি। যদিও এখন আমাদের খাবারের অনিশ্চয়তা নেই। অন্তত আমি আপনি যারা এই পোস্টটি পরছেন তাদের নেই বলে আশা করলেই চলে। আমাদের মস্তিষ্ক এখনও সেই অভ্যেসে জড়িয়ে আছে। এই কারনেই আমরা দিনের ৮০% সময় অলস ভাবে এবং২০% সময় একটিভ ভাবে কাটাই। এখন সমস্যাটা হলো কারো কারো ৮০-২০% এর বদলে ৯৯-১% এ চলে এসেছে।
অলসতা কিভাবে বদলানো যায়?
আমাদের মস্তেষ্কে ডোপামিন নামে একটি হরমনের ক্ষরন হয় যেটা আমাদের যেকোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছা শক্তিকে ভিষন ভাবে নিয়ন্ত্রন করে। এই ডোপামিন সিসটেম টাকেও মস্তিষ্কের রিওর্য়াট সার্কিটারি ও বলা হয়। ফেসবুক দেখতে বা গেম খেলতে কি কোখনো আমরা অলসতা করি? ঘন্টার পর ঘন্টা কোনো পরিশ্রম ছারাই আমরা এইগুলো করে যাই। কিন্তু বই পড়ার ব্যাপারে সেই ক্ষেত্রে তো পাচঁ মিনিটও পাচঁ ঘন্টার সমান মনে হয়। এরকম কেন হয়? আমরা যখন গেম খেলি বা ফোন স্ক্রোল করি তখন আমাদের ব্রেনের রিওর্য়াট সার্কিটারিগুলো একটিভ হয়ে যায়। কারন এগুলোতে আমরা প্রতি মূহুর্তে নতুন কিছু এক্সপ্রিয়েন্স করি। কিছু সময় পরপরি আমরা নতুন কিছুি উপভোগ করি। যেটা আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমনের নিস্বরনকে বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আমরা ক্রমাগত একটা ভালো লাগা অনুভব করতে থাকি এবং ধীরে ধীরে সেটার প্রতি আসক্ত হয়ে পরি। এই কারনেই পরীক্ষার আগে পড়তে বসতে আমাদের কোনো অলসতাই লাগে না। কারন তখন আমদের ব্রেনে শুধু এইটাই কাজ করে যে পড়লে ভালো নম্বর পাবো আর না পরলে পাব না। তাই বুঝা যায় অলসতা আর ভালো লাগার জন্য দায়ী আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিনের রিওর্য়াট সার্কিটারি। তো অলসতা দূর করার জন্য আমাদের মূল লক্ষ হওয়া উচিত কি করে আমরা আমাদের রিওর্য়াট সার্কিটারিকে আমাদের ক্ষতি করা থেকে বিরত রেখে উল্ট বরং আমাদের উপকারের জন্য কাজে লাগাতে পারি। আর এটা করতে পারলেই আমরা আমাদের অলসতাকে গোড়া থেকে কমিয়ে ফেলতে পারব। এই কাজটা করার অনেকগুলো উপায় আছে। কিন্তু বাস্তব হলো এর মধ্যে ৮০% উপায়ই ভিষন অব্যবহারিক। মানে আমাদের মত সাধারন মানুষেের বেশিরভাগ সময়ই সেগুলোকে অনুসরন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ২০% এই রকম উপায় রয়েছে যেগুলো খুবই সাধারন এবং সেগুলোকে অনুসরন করা আমাদের পক্ষে খুবই সহজ। আমি তার মধ্যে থেকে কিছু উপায় আজ আপনাদের মধ্যে সেয়ার করবো।
নম্বর:১: বিছানা এড়িয়ে চলুন:
আমরা সারাদিন যত কাজ করি তার মধ্যে ৯০% ই হয় আমাদের অবচেতন মনের দ্বারা। অর্থাৎ আমাদের সেগুলোকে ভেবে ভেবে করতে হয় না। আমরা একাই এগুলো করে ফেলি। এবার যে বিছানায় আপনি রাতে ঘুমান সেই বিছানায় যদি আপনি সারা দিন সুয়ে বসে কাটান তো সারাদিন আপনার অবচেতন মন আপনার মস্তিষ্কের কাছে এসে সিগনাল দিতে থাকে যে এটা হয়তো ঘুমের সময়। ফল স্বরূপ আপনি সারাদিন অলসতা অনুভব করেন। এটাকে বদলে একটা নতুন অভ্যেস তৈরি করতে হবে। ঘুম থেকে সকালে উঠার পরে যতক্ষন না আবার ঘুমাতে যাচ্ছেন তার মাঝে কখনই আর ওই বিছানায় উঠবেন না। এমন কি পরলে সোফাও এরিয়ে চলুন। এমন কোনো যায়গায় বসে যদি আপনি সময় কাটান যেখানের সাথে ঘুম শব্দটা জড়িয়ে আছে সেখানে গেলেেই আপনার মন আপনাকে ঘুমের সিগনাল দিতে থাকবে। তাই আমি মনে করি মেঝেতে কার্পেট জাতীয় কিছু বিছিয়ে কাজ করুন। মেঝেতে বসে সময় কাটানোর জন্য আপনি শুধু অলসতার ক্ষেত্রেই নয় তার সাথে সাথে আরো হাজারেরও বেশি উপকারিতা পাবেন। এটা আপনার শরীর সুস্থ রাখতে মন ভালো রাখতে আরও অনেক ক্ষেত্রে উপকার করবে। তাই এক মাত্র ঘুমানো ছারা বাকি পুরোটা সময় মেঝেতে কাটানোর চেষ্টা করুন। এক ভাবে না থেকে কিছু সময় হেলান দিয়ে বা কিছু সময় হাটা হাটি করে সময় কাটান।
নম্বর:২:এক্সারসাইজ:
অলসতা মূলত ২ ধরনের। একটা শারীরিক আর একটা মানসিক। শারীরিক অলসতাকে দূর না করে মানসিক অলসতাকে দূর করা একবারে অসম্ভব। যেটার জন্য একমাত্র উপায় হলো এক্সারসাইজ। কিছু কিছু লোক থাকবে দেখবেন যারা এক্সারসাইজের প্রতি আসক্ত। তারা একদিন জিম না করলেও যেন তাদের চলে না। এক্সারসাইজ আমাদের ডোপামিন হরমনের ক্ষরনকে অর্থাৎ রিওর্য়াট সার্কিটারিতে সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলে। যে যেই জিনিসটার সঙ্গে নিজের লিংক করে তোলে সে সেই জিনিস টাই তত বেশি উপভোগ করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সেই জিনিসটার প্রতি আসক্ত হয়ে পরে। এক্সারসাইজ অতন্ত উপকারি। এক্সারসাইজও আপনাকে আসক্ত করে ফেলতে পারে। তাই আপনি যদি কিছুদিন কষ্ট করে নিয়মিত ভাবে নিজের রিওর্য়াট সার্কিটারিকে একবার এক্সরসাইজ এর সাথে লিংক করে নিতে পারেন তাহলেই অলসতা দূর করার আর একটি কাজ হাসিল হয়ে যাবে। এর ফলে অলসতা তো দূর হবেই তার সাথে সথে আপনার শরীরও সুস্থ থাকবে।
নম্বর:৩:রিওয়ার্ড ইউরসেল্ফ:
আমাদের মূল লক্ষ হলো আমাদের রিওর্য়াট সার্কিটারিকে উপকারের জন্য কাজে লাগানো। কিন্তু পড়ার ক্ষেত্রে এটাকে কিভাবে একটিভেট করবো? শুধু পড়াই না যে কোনো কাজ যেটা আপনি যানেন যে এটা আপনার জন্য ভালো কিন্তু অলসতার কারনে কিছুতেই এটা করে উঠতে পারছেন না। সেখানে ডোপামিনের ক্ষরনের জন্য আপনাকে একান্ত নিজেকে নিজেই বাহোবা দিতে হবে। মানে এখন যদি আপনার রিওর্য়াট সার্কেটারিতে ফুলের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে বা ধরুন আপনি বিরিয়ানি খেতে ভালোবসেন তাহলে আপনি নিজেকে নিজে কথা দিন যে এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আপনি তিনটা চেপ্টার শেষ করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেকে নিজে বিরিয়ানি উপহার দিবেন। যখনি আপনি এরকম করবেন তখনি আপনার রিওর্য়াট সার্কিটারি একটিভেট হয়ে যাবে এবং পড়ার জন্য বা সেই কাজের জন্য আপনি আলাদাই একটা আনন্দ উপভোগ করবেন। খুবই সহজ এবং মজাদার একটা পদ্ধতি।
কোনো এক মহান ব্যক্তি বলেছিলেন যে:
“Everything is easy
when you are crazy
and
Nothing is easy
when you are lazy”
এই তিনটা র্স্মাট আইডিয়ার মধ্যে অলসতা দূর করতে যেকোনো একটা র্স্মাট আইডিয়া বেছে নিন। সব থেকে ভালো হয় যদি সব গুলো র্স্মাট আইডিয়া অনুসরন করতে পারেন । যেটা আপনার কাছে সব থেকে সহজ সেটা দিয়েই শুরু করুন এবং আজ থেকেই সেটা করুন। আর এক সপ্তাহ পর ফিরে এসে আপনি কোনো পরিবর্তন অনুভব করছেন কিনা সেটা এসে আমাদের কমেন্ট করে যানান। কারন আপনার প্রতিক্রিয়াই আমাদের প্রেরনা দেয়। আর এটাই আমাদের রিওর্য়াট সার্কিটরিকে একটিভেট করে। যদি এই পোস্ট এর মাধ্যমে আপনার নিজের জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান হয় তাহলে আপনাদের কাছে আবেদন য়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য বলছি।