মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নানা সাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হয়। যার মধ্যে এই কোষ্ঠকাঠিন্য একটি। একজন ব্যক্তি যখন সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না তখন এটি ওই ব্যক্তির জন্য একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারনে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন:এনাল ফিশার বা গেজ রোগ,পাইলস,ফিস্টূলা এবং মলত্যাগের সময় রক্তপাত ইত্যাদির মত জটিল রোগ হতে দেখা যায়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তাই এই শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই খুব পরিচিত। বাংলায় একটি প্রবাদ আমাদের সকলের কাছেই খুব পরিচিত “ পেট শান্তি তো, পুরো দুনিয়া শান্তি”। তাই আজ আমরা জানব যে কিভাবে আমরা আমাদে পেট শান্তি অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারবো।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ কি?
একজন ব্যাক্তি যখন সহজে মলত্যাগ করতে না পারে, মলত্যাগের বেগ যদি এক-দুই দিন পরপর হয় এবং সেই মল যদি শুষ্ক হয় তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। যা সাধারন মানুষের কাছে কষা বলে পরিচিত। পায়খানা কষা কেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে কেউ যদি পরিমাণ মত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় হয় তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এমতাবস্থায় অনেকক্ষন বসে থাকার পরও পায়খানা পরিষ্কার হয় না।
কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারন:
১) খাবারের মধ্যে আঁশযুক্ত খাবার না থাকার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়।
২) খাদ্য তালিকাতে যথেষ্ট পরিমানে শাকসবজি না থাকলে এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়।
৩) পরিমানমত পানি পান না করার ফলে এই রোগ হয়।
৪) দুশ্চিন্তায় ভোগা ও মানসিক চাপের জন্যও এই রোগ হয়।
৫)মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
৬) অতি মত্রায় ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে এই রোগ দেখা দেয়।
৭) অলসতা ও পরিশ্রমের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আরেকটি কারন।
৮) মাদক দ্রব্য সেবনের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৯) বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
১০) সঠিক ভাবে হজমক্রিয়া না হলে এই রোগ হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষন:
১) সপ্তাহে তিন বারের কম পায়খানা হওয়া।
২) মলত্যাগ করতে কষ্ট হওয়া।
৩) তলপেটে ব্যথা অনুভব করা।
৪) মল শুষ্ক, শক্ত চাকার মত যাওয়া।
৫) পায়খানা করতে অনেক সময় লাগা এবং অনেক চাপের দরকার হওয়া।
৬) দীর্ঘক্ষণ যাবত মল ত্যাগের পরও পেট পরিষ্কর হয় নি মনে হওয়া।
৭) পেট ফাঁপা ফাঁপা লাগা।
৮) মলের আকৃতি বড় মনে হওয়া।
৯) সাপোজিটরির মাধ্যমে মল পরিষ্কার করার চেষ্টা করা।
১০) বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি করা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে যে সব জটিলতা দেখা দেয়:
১) কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে হতে পারে অনিদ্রা, রক্তস্বল্পতা, কোমরে ব্যথা, চোখে ব্যথা, অবসাদের মত সমস্যা।
২) কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হতে পারে পাইলস, গেজ বা অ্যানাল ফিশার, মলদ্বার বের হয়ে আসা, মলত্যাগের সময় রক্তপাত হওয়ার মত সমস্যা।
৩) অরুচি,পেট ফাঁপা বা বমি হওয়া। আর এই সব সমস্যার জন্য হতে পারে আলসার সহ আরো অনেক রোগ।
৪) দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হতে পারে চর্মরোগ। যেমন: মেচেতা, এর্লাজি, চুলকানি ইত্যাদি।
৫) কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হতে পারে ক্ষুধামন্দ,মুখে দুর্গন্ধ, পেটে গ্যাস সহ ইত্যাদি আরো অনেক পেটের সমস্যা।
৬) মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগে ফলে হতে পারে রেকটাল প্রোল্যাপস এর মত রোগ।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে হতে পারে খাদ্যনালিতে আলসার, খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লেগে যাওয়া, খাদ্যনালী ফুটো হয়ে যাওয়ার মত বড় সমস্যা।
৮) কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য মানুষের মনে তৈরি হয় প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও অশান্তি।
৯) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যত তীব্র হয় রোগী তত বেশি দূর্বল হয়ে পরে।
১০) দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে হতে পারে লিভার ক্যান্সার সহ নানা ধরনের জটিল সব রোগ।