আপনার যতই বুদ্ধি থাকুক না কেন আপনি যদি গুছিয়ে কথা বলতে না পারেন যদি নিজের চিন্তা ভাবনাকে গুছিয়ে প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে আপনি আপনার পারসোনাল লাইফে বা প্রফেশনাল লাইফে কারো সাথেই ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন না। গুছিয়ে কথা বলার জন্য এবং নিজের চিন্তা ভাবনা ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে প্রকাশ করার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হলো যোগাযোগের দক্ষতা বা কথা বলার দক্ষতা। এক জন শিক্ষর্থীকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহি করতে এবং পড়াশোনাটাকে তার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে একজন শিক্ষকের যেটা দরকার সেটা হলো কথা বলার দক্ষতা। চাকরির ইন্টারভউতেও গুছিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইন্টারভউ র্বোডকে ইমপ্রেস করার জন্য একজন চাকরি প্রার্থীর যেটা দরকার সেটা হলো তার কথা বলার বা কথা উপস্থিত করার দক্ষতা। একজন রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে সহজ ভাবে বুঝিয়ে তার চিন্তা কমিয়ে তাকে আস্যস্ত করার জন্য একজন ডাক্তারের যেটা দরকার সেটা হলো তার কথা বলার দক্ষতা। একজন কাস্টমারকে প্রোডক্ট সম্পর্কে ভালো ভাবে বুঝিয়ে প্রোডাক্ট কেনার জন্য রাজি করার ক্ষেত্রেে একজন বিক্রেতার যেটা দরকার সেটা হলো কথা বলার দক্ষতা। টিমের সব প্লেয়ার কে সাথে নিয়ে মেচ জেতার জন্য একজন টিম কেপ্টেনের যেটা দরকার সেটা হলো কথা বলার বা কথা বুঝাবার দক্ষতা। নিজের ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুর মত করে মেসার জন্য যেটা দরকার সেটা হলো কথা বলার দক্ষতা। যেকোনো বিষয় অর্থাৎ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কথা বলার দক্ষতা খুব দরকার। যাদের মাঝে কথা বলার দক্ষতা আছে তারা বাকি সবার তুলনায় এগিয়ে আছে এবং তাদের সফলতার হারও বেশি। তাই চালাকির সাথে কথা বলে নিজের দক্ষতা প্রমান করার জন্য নিচের ধাপ গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন:
নম্বর :১: সামনের মানুষটার আগ্রহের যায়গা খুঁজে বের করুন:
মানুষকে তার নিজের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। এই ব্যপারটি যদি সহজে ভালো ভাবে কাজে লাগাতে চান তবে যেটা করতে হবে সেটা হলো অন্যের সবচেয়ে আগ্রহের যায়গা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেটা সম্পর্কে তার সাথে কথা বলতে হবে। তাতে সে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে আপনার সাথে কথা বলবে। যেমন ধরুন কারো যদি টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ থাকে তবে তার সাথে টেকনোলজি নিয়ে কথা বলুন। আপনাকে টেকনোলজি সম্পর্কে খুব বেশি যানতে হবে না আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করুন। তার কাছ থেকে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করুন। দেখবেন সে নিজের আগ্রহেই আপনার সাথে কথা বলছে এবং তার পর আপনি তাকে যা বলবেন দেখবেন সে সেটাই খুব আগ্রহের সাথে করছে। আপনি যদি কারো সাথে কথা বলার আগে বা কথা বলার মাঝে তার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলতে পারেন তবে হয়তো আপনি সম্ভবত তার কাছ থেকে এমন কিছু আদায় করতে পারবেন যা সাধারন অবস্থাতে কল্পনা কলা যায় না। তাই কারো সাথে কথা বলার আগে তার আগ্রহের বিষয়টি খুজে বের করুন এবং তার সাথে সে বিষয়ে কথা বলুন।
নম্বর:২:অপর পক্ষকে এটা ভাবতে দিন যে সিদ্ধান্তটা সেই নিচ্ছে:
ধরুন আপনি নতুন বিয়ে করেছেন। আপনার পছন্দের রং নীল আর হলুদ। আপনি আপনার হাসবেন্ড বা ওয়াইফের সাথে আলোচনা করছেন যে জানালায় কি রঙের পর্দা লাগাবেন? আপনি তাকে বললেন যে আপনার প্রিয় রং নীল আর হলুদ। তাই জানালায় নীল বা হলুদ রঙের পর্দা দিতে হবে। এটা বলার পর অপর পক্ষেরও তার প্রিয় রঙের কথা মনে পরে যাবে এবং সেটা যদি আপনার সাথে না মেলে তাহলে কিন্তু সমস্যা। বাধ্য হয়ে সে যদি আপনার কথা মেনে নেয় তাহলেও কিন্তু তার মধ্যে একটা আফসোস থেকে যাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে আপনি যদি একটু চালাকি করে অন্য ভাবে কথাটা বলেন তাহলে কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার সম্ভবনা অনেক কমে যাবে। নিজের পছন্দের কথা না বলে আপনি তাকে বলতে পারেন যে “আচ্ছা জানালায় কি রঙের পর্দা দিলে ভালো হয়? নীল রঙের নাকি হলুদ রঙের?” এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার খমতা যদি অপর পক্ষের হাতে ছেরে দেন তাহলে ৯০ ভাগ এর বিশি লোকই আপনার দেওয়া দুটি অপশনের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিবে। সে ভাববে সিদ্ধান্তটা সে নিচ্ছে কিন্তু আসলে সে আপনার পাতা জালেই ধরা পরেছে। এভাবে যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার কাজটা অন্যকে দিয়ে চালাকির সাথে করিয়ে নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে অভিনয়টা অনেক ভালো করতে হবে। তার সামনে এমন একটা ভাব করতে হবে যে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। ৯০ ভাগের বিশি লোকি আপনার দেওয়া অপশনগুলো থেকে একটা বেছে নিবে।
নম্বর;৩: অহেতুক বিতর্ক এড়িয়ে চলুন:
অন্যকেই ভালো অনুভব করানোর মাধ্যমেই নিজেকে তার কাছে পছন্দের পাত্র করে গোরে তোলা যায়। আরেক জন মানুষকে খারাপ বা ছোট অনুভব করানোর জন্য তার সাথে তর্ক বিতর্কে যাওয়া এবং বিতর্কে তাকে হারিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই। আপনি যার সাথে বিতর্কে জরাবেন বা যাকে বিতর্কে হারিয়ে দিবেন সে সবসময় আপনাকে এরিয়ে চলতে চাইবে। খেয়াল করলে দেখবেন কিছু বিষেষ মতাদর্শি লোককে কেও পছন্দ করে না। সবায় তাদের এরিয়ে চলতে চায়। এর পিছনে কিন্তু তাদের মতাদর্শি দায়ী নয়। এরা আসলে বিতর্কের মাধ্যমে অন্যের বিশ্বাস আর যুক্তি কে খাটো করতে চায় বলে এদের কেও পছন্দ করে না। আপনি যদি কারো কাছে পছন্দের পাত্র হতে চান তবে সবার প্রথমে তার সাথে সব রকমের বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। আর কোন ভাবে যদি মত বিরোধ তৈরি হয় তবে তাকে জিততে দিন। তবে এমন ভাবে জিততে দিবেন না যাতে সে এটা বুঝতে পারে যে আপনি তাকে ইচ্ছা করেই জিততে দিচ্ছেন। এমন ভাবে জিততে দিন যাতে সামনের মানুষটা এটা বুঝতে পারে যে সে তার যক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে জিতেছে। এতে করে সে আপনাকে অনেক পুরোনো বন্ধুর চেও কাছের মনে করবে। কাজেই কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় না হলে কখোনই কোনো বিতর্কে যড়াবেন না। তাহলেই দেখবেন অনেক মানুষের সাথেই আপনার খুব সহজেই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
নম্বর:৪:সবসময় জেতার চেষ্টা করবেন না:
শুধু নিজে জেতার বদলে যদি নিজের পাশাপাশি অন্যকেও জেতাতে পারেন তাহলে দুই দিক থেকেই আপনার লাভ। প্রথমত আপনি জিতলেন আর দ্বিতীয়ত অন্যকে জিততে দেওয়ার ফলে আপনাদের মাঝে সম্পর্কের যায়গাটিও ঠিক থাকলো। সব সময় যদি আপনি নিজে জিততে চান এবং সব যায়গায় যদি শুধু আপনার মতামত খাটাতে চান তাহলে কিছু দিন পর কেওই আর আপনার কথা শুনতে চাইবে না এবং আপনাকে এড়িয়ে যেতে চাইবে। তাই মানুষকে ছোট ছোট ব্যাপারে ছার দিন। সম্ভব হলে বড় ব্যাপারেও ছার দিন। তাহলে আপনার প্রতি অন্যদের একটা ভালো ধারনা তৈরি হবে এবং আপনার প্রয়োজনেও তারা আপনাকে ছার দিবে।
নিজেকে জেদী আর গোয়ার মানুষের বদলে আপনি মানুষের সামনে নিজেকে একজন উদার মনের মানুষ হিসেবে তলে ধরলে তাহলে দেখবেন তারাও আপনার প্রতি উদারতা দেখাবে। কিছু মানুষ মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং তাদের ইগো অনেক বেশি তারা কোনো ভাবেই কাওকে ছার দিতে চায় না। এ ধরনের মানুষকে কেওই পছন্দ করে না এবং এই ধরনের মানুষকে ছার দিতে দিতে অন্যরা অতিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে এদের কোনো কিছুতেই ছার দিতে চায় না। তাই আপনার মধ্যে যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আজ থেকেই সেই সমস্যা দূর করার কাজে লেগে পরুন এবং নিজের ইগো আর স্লেফ রেসপেক্ট এর পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করূন। আর এই ভাবে চালাকির সাথে কথা বলে নিজেকে অন্যের কাছে ভালো বলে প্রমান করুন। আর জিবনে নিয়ে আনুন সফলতা।