চোখের সাতটি রোগ এবং তা সারিয়ে তোলার উপায়

চোখের সাতটি রোগ এবং তা সারিয়ে তোলার উপায়

Tips and Tricks

মানুষের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোখ। তাই আমার মতো চশমা পড়ে হোক বা চশমা ছাড়া চোখকে সুস্থ্য রাখা খুবই জরুরী। আজ চোখের সাতটি সমস্যা নিয়ে কথা বলবো এবং জানিয়ে দিবো চক্ষু বিষেষজ্ঞরা এই বিষয়ে কি কি সমাধান দিচ্ছে। তাই চলুন জেনে নেই এর সমাধান-

চোখের সাতটি রোগ এবং তা সারিয়ে তোলার উপায়

চোখ ওঠা

চোখ যদি লাল হয়ে যায়, চুলকায় এবং জালাপোড়া করে, খচখচ করে এবং বার বার ময়লা জমে তাহলে এটা চোখ উঠার লক্ষন। সাধারনত চোখে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জনিত সংক্রমন থেকে এমনকি ধুলাবালি এবং রেনুর এলার্জি থেকেও চোখ উঠতে পারে। আবার আজ কাল মানুষ হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করছে, এটি হাত থেকে চোখে গেলেও চোখে প্রদাহ হতে পারে। চক্ষু বিষেষজ্ঞ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন “চোখ উঠলে নরম তুলা পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত চোখ বার বার মুছতে হবে। এক চোখের তুলা অন্য চোখে ব্যবহার করবেন না। চোখ উঠা  ছোয়াচে হওয়ায় অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. রহমান। তবে টানা দুই তিন দিনেও চোখ ঠিক না হলে অবশ্যই বিষেষজ্ঞদের পরামর্শ নিবেন।

অঞ্জলি

চোখের উপরে বা নিচের পাতায় গোটার মতো দেখা দিলে তাকে অঞ্জলি বলে। এতে চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় এবং ব্যাথ্যা করে। বিষেষজ্ঞরা বলেছেন “ দিনে কয়েক বার নরম তুলা গরম পানিতে ভিজিয়ে চোখ মুছলে চোখের ফুলা কমে যাবে। এ সময় চোখ জালাপোড় করে না এ রকম শ্যাম্পু ব্যবহার করার কথা বলেছেন ডাঃ রহমান। সাধারনত অঞ্জলি দুই তিন দিনের ভিতর আপনা আপনি সেড়ে যায়। এরপরও না ছেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

ছানি

চোখের অনেক সাধারন সমস্যার মধ্যে একটি হলো ছানি পড়া। চোখে ছানি পড়লে চোখের লেন্সের ভিতর ধূসর বা অনেক সাদা সাদা দাগ পড়ে। ফলে আলো আর প্রবেশ করতে পারে না। এতে রোগির চোখ ঝাপসা হতে হতে এমনি চোখের দৃষ্টি চলেও যেতে পারে। সাধারনত বয়স্কদের এই রোগ হয় তবে শিশু এবং তরুনরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমাধান একটাই চোখের অপারেশন করা। ঘোলা লেন্স সরিয়ে পরিষ্কার লেন্স বসালে চোখ সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়। 

গ্লোকমা

সাধারনত চোখের ভেতরে বেশি চাপ বা পেশার পড়ে বা চোখে বড় ধরনের আধাত লাগে তাহলে চোখের স্নায়ু গুলো আধাত প্রাপ্ত হয়। একারণে একজন রোগি চিরতরে তার দৃষ্টি হারাতে পারেন। চোখের এ পেশার কমে যাওয়াকে গ্লোকমা বলে। গ্লোকমার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষন না থাকায় একে নিরব রোগও বলা হয়। কারণ গ্লোকমা হলে দৃষ্টি পূর্বের অবস্থায় ফেরানো যায় না। চিকিৎসার মাধ্যমে যত টুকু দৃষ্টি আছে সেটাই রক্ষা করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়তে ঔষধ এবং ড্রপের মাধ্যমে চোখ ঠিক করা যায়। পরিস্থিতি গুরুত্বর হলে অপারেশনই একমাত্র ভরসা। মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকলে, অল্প আলোতে কাজ করলে, ছোট ছোট লেখা পড়লে কিংবা সুইয়ে সুতা ভরার মতো সুক্ষ কাজ করলে, পর্যাপ্ত না গুমালে চোখে পেশার পড়ে। এসব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চশমা ব্যবহার করতে হবে। 

ঝাপসা দৃষ্টি

যদি কাছের বস্তু বা দুরের বস্তু ঝাপসা দেখেন তাহলে চোখের চিকিৎসক দেখিয়ে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করিয়ে নিন। যদি চশমা লাগে তাহলে ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো দোকান থেকে চশমা বানিয়ে চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। অনেকে চশমা এড়িয়ে যেতে কন্ট্রাক লেন্স ব্যবহার করেন। যদি পরিষ্কার থেকে ভালো মানের চশমা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে লেন্স পড়বেন। এমন জায়গায় লেন্স পড়বেন যেখানে ধুলাবালি বা দূষণ নেই। লেন্স পড়া অবস্থায় ঘুমাবেন না, গোসল করবেন না বা গরম  গোস্ত এর সামনে যাবেন না। অন্যের লেন্স, নষ্ট বা নোংরা লেন্স বা মেয়াদ উত্তীর্ণ লেন্স ব্যবহার করবেন না। চোখের পাওয়ার ফিরে পাওয়ার আর একটি উপায় লেসিক। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থ্যা নিন।

ফ্লোটার্স

আপনার ফ্লোটার্স আছে কি না তা বুঝতে যেকোনো উজ্জল দৃষ্টি যেমন মেঘ মুক্ত নীল আকাশ এ তাকিয়ে থাকুন। তখন ছেড়া সুতো বা বিন্দুর মতো দাগ দেখতে পান সেগুলাই ফ্লোটার্স। চোখগুলো যে দিকে সড়াবেন ফ্লোটার্স গুলো সে দিকেই সড়তে থাকে। এগুলো ক্ষতিকর কিছু না, তবে হঠাৎ অনেক ফ্লোটার্স দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

ট্যারা চোখ

কোনো একটি বা দুটি চোখের মনি যদি পাশে সড়ে যায় তাহলে আমরা তাকে ট্যারা চোখ বলি। ট্যারা চোখের দৃষ্টি যদি ঝাপসা থাকে তাহলে চশমা, ঔষধ বা ব্যায়ামের মাধ্যমে আগে চোখের দৃষ্টি ঠিক করা হয় এবং এরপর ট্যারা চোখ অস্রপাচার করে সোজা করা হয়। 

নিয়মিত ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমান। এছাড়া কাজের ফাকে চোখকে বিশ্রাম দিন। এজন্য ২০ ২০ সুত্র মানতে পারেন। যেমন কাজের সময় বিশ মিনিট বিরতিতে ২০ ফুট দুরের বস্তুতে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে থাকুন। চোখের খাবার হলো ভিটামিন এ, সি এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। তাই নিয়মিত রঙিন সবজি ও ফল যেমনঃ মিষ্টি কুমড়া, গাজর, সবুজ শাক, আম, পেপে, কমলা এসব খান। সেই সঙ্গে সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, দুধ, মাছ, ডিম ইত্যাদিও খেতে হবে। শিশুদের ভিটামিন এ এর অভাব হলে রাত কানা বা অন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে। এজন্য শিশুকে নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ান। সেই সঙ্গে তাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া চোখ আদ্র থাকলে প্রচুর পানি খাওয়া জরুরী। বিশেষ করে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে বা আপনি এয়ারকন্ডিশনার এর ভেতর এ থাকলে পানি খাওয়া বাড়াতে হবে। আর একটি বিষয় ধুমপান করবেন না। চোখ চুলকালে পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিন। কখনও চোখ কচলাবেন না। চোখ পরিষ্কার ও আদ্র রাখতে কিছু সময় পর পর পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিতে পারেন। এছাড়া নিম্ন মানের প্রশাধনি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া দুই চোখে তাপ দিন যেমনঃ দুই হাতের তালু ঘসে তাপ উৎপন্ন করে বন্ধ চোখের উপর রাখুন আরাম অনুবোভ হবে। কম্পিউটার, টেলিভিশন বিশেষ করে স্মার্টফোন দীর্ঘ সময় ব্যবহারের কারনে চোখের পাতা কম ফেলা হয়। এজন্য শুষ্কতা দেখা দেয়। যদি একদম ব্যবহার করতেই হয় তাহলে তা এক ফুট থেকে চার ফুট দুরত্বে রেখে দেখুন। সেই সঙ্গে এই ডিভাইসগুলোর উজ্জলতা কমিয়ে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো ব্লু লাইট অপশন বন্ধ রাখতে পারি। এছাড়া ঘরের বাতি নিভিয়ে কখনও স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। চোখকে ধুলাবলি ও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে দূরে রাখতে টুপি বা রোদ থেকে চোখকে রক্ষা করে এমন চশমা ব্যবহার করুন। ভারি কোনো কাজ করলে যেমন ওয়েল্ডিং করা, কিটনাশক ব্যবহার করা, হাতুরি ব্যবহার ইত্যাদির ক্ষেত্রে অবশ্যই সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করুন। 

ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *