আমি চাই না এইগুলো ভাবতে। তাও কেন বার বার এগুলোই আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে। উফফ কী করে যে বন্ধ করি এটাকে? আচ্ছা বলুন তো এমন কোন নেশা আছে যাতে পৃথীবির প্রায় ৯৯.৯% মানুষই আসক্ত। নিশ্চই মাথায় আসছে না আপনার। সেটা হলো চিন্তা করার আসক্তি। একজন সিগারেটে আসক্ত ব্যক্তি যেমন একের পর এক সিগারেট ধরিয়েই চলে ঠিক তেমনি একজন চিন্তায় আসক্ত ব্যক্তি একের পর এক চিন্তা করেই চলে। আর সব থেকে বড় কথা সে চাইলেও সেটাকে থামাতে পারে না। বিশ্বাস না হলে এখনি একবার চেষ্টা করে দেখুন যে পরর্বতী ১০ সেকেন্ড কোনো রকম কোনো চিন্তা না করে থাকতে পারেন কিনা? কি হলো পারলেন না তো? দুঃখের কিছু নেই আমাদের মধ্যে ৯৯.৯% লোকই আপনার দলে। যারা নিজেরা নিজের মনকে কনট্রল করে না বরং তাদের মন তাদের নিজেকে কনট্রল করে। আর মনের প্রিয় খাবার হলো অনুভব। তাই মন আমাদেরকে ব্যবহার করে নিজের খাবারে যোগার করে চলেছে। এক কথায় বললে মন আমাদের কে দাসে পরিনত করে ফেলেছে। তাই আজ আমি আপনাদের এই দুঃশ্চিন্তা দূর করার জন্য Eckhart Tolle এর “The power of now” এই বই থেকে কিছু র্স্মাট আইডিয়া সেয়ার করবো। যা কিনা আপনাকে চিন্তা মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ১: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময়:
Eckhart Tolle মনে করে আমরা সেই প্রতিটা সময় নষ্ট করি যেই সময়টা তে আমরা হয় অতিতের ব্যপারে আফসোস করে কাটাই অথবা ভবিষ্যতের ব্যপারে দুঃশ্চিন্তা করে কাটাই। কারন আমরা সবসময় বর্তমানেই বাচি। যা কিছু ঘটে এবং যা কিছু আমরা অনুভব করি তা শুধুমাত্র ঘটে বর্তমানে। যদি আপনি একটু ভেবে দেখেন যে অতিত আর কিছুই নয় শুধুমাত্র বর্তমান মূহুর্তের সমষ্টি যেগুলো পেরিয়ে গেছে এবং ভবিষ্যৎ হলো কতগুলো বর্তমান সময়ের সমষ্টি যেগুলো আসতে চলেছে। তাই বর্তমান ছারা অন্য যেকোনো যায়গায় বসবাস করা বা চিন্তা করাটা পুরোটাই অর্থহীন প্রচেষ্টা। যদি আগামি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে একটা প্রজেক্ট সম্পূর্ন করতে হয় তাহলে অতিতে যে সময়টুকু আপনি আজ নয় কাল করে নষ্ট করে ফেলেছেন সেটা নিয়ে আফসোস করা বা ভবিষ্যতে যে আপনি একটা ভিষন চপের সম্মুখীন হতে চলেছেন সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা এদের মধ্যে কোনোটাই কোনো কাজের নয়। শুধুমাত্র সেটাই কাজের হবে যদি আপনি বর্তমান সময়ে কাজটা করতে শুরূ করেন এবং ধীরে ধীরে সেটা শেষ করার চেষ্টা করেন।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ২: তুমি তোমার মন না:
আমাদের মন অত্যান্ত ক্ষমতাশীল একটি অস্ত্র। যদি সেটাকে আমরা সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করি। কিন্তু সমস্যাটা হলো আমরা বেশির ভাগ সময় সচেতন ভাবে আমদের মস্তিষ্ককে সঠিক ভাবে ব্যবহার করি না। বরং আমাদের মস্তিষ্কের দ্বারা ব্যবহৃত হই। এক বার নিজেকে নিজে এই প্রশ্নটা করে দেখুন যে আমি কে? আমার পরিচয় ঠিক কী? যদি আপনার উত্তর এইগুলো নিয়ে তৈরি হয় যে আপনি একজন ছাত্র কিংবা আপনি একজন সরকারি কর্মচারি বা যদি আপনার উত্তর সামাজিক পরিচয় শিক্ষা,দক্ষতা, সম্পর্ক কিংবা বিশ্বাস বা যদি পারিবারিক কিছু হয় তাহলে আপনি একবার ভেবে দেখুন সত্যি বলতে এই গুলোর কোনোটাই কি আপনি? নাকি এইগুলো আপনার মস্তিষ্কের দ্বারা বাহিরের থেকে সংগ্রহ করা শুধুমাত্র কিছু তথ্য। মৃত্যুর পরের কথা না হয় বাদই দিলাম। এইগুলোর কোনোটাই কি ঘুমের সময়ও আপনার সঙ্গে থাকে? থাকে না তাই তো। কিন্তু আপনিতো ঘুমের সময়ও উপস্থিত থাকেন। যদি তা না থাকতেন তাহলে কিভাবে যানতেন যে আপনি সেই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন বা আপনি কোনো শ্বপ্ন দেখেছিলেন। Eckhart Tolle এই জিনিস গুলোকেই বলেছেন ইগো। যেগুলো আমরা নই কিন্তু আমরা সেগুলোকে নিজেদের অংশ বলে মেনে নিয়েছি। যে গুলো শুধুমাত্র আমাদের সংগ্রহ করা কিছু তথ্য। তাই তিনি তুমি তোমার মন না বলে এইটি লাইন বর্ননা করেছেন।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ৩: উপস্থিত হচ্ছে জ্ঞানার্জনের উপায়:
যে কোনো রকমের মানষিক দুঃখ বা কষ্টের প্রধার উৎস হলো আমাদের মিথ্যা আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা। সেই সমস্ত জিনিস যেগুলোকে আমরা নিজেদের অংশ বলে মেনে নিয়েছি। কিন্তু আসলে যেগুলো আমরা না। যদি আপনি শুধুমাত্র এই মূহুর্তটাতেই বেঁচে থাকেন তাহলে কি আপনার জিবনে কোনো কষ্ট বা সমস্যার অস্তিত্ব আছে? কষ্ট তখনি তৈরি হয় যখন আমরা অতিত বা ভবিষ্যতের নিজেদের মিথ্যা একাত্মতাকে কেন্দ্র করে কিছু চিন্তা করি এবং বর্তমান সময় থেকে সরে গিয়ে অতিত বা ভবিষ্যতে বাঁচার চেষ্টা করি। ভাবুন কোনো একটা যন্ত্রের সাহায্যে আপনার ব্রেন থেকে সমস্ত স্মৃতিগুলোকে এক মিনিটের জন্য মুছে দেওয়া হলো এবং ওই এক মিনিট আপনি শুধু এবং শুধুমাত্র বর্তমানটাকে অনুভব করলেন। চারি দিকে কি কি রয়েছে? কিসের কিসের আওয়াজ শুনতে পারছেন? কিসের কিসের গন্ধ আপনার নাকে আসছে? কি কি স্পর্শ অনুভুতি আপনি অনুভব করছেন? অর্থাৎ কোনো রকম কোনো বিচার ছাড়া আপনি শুধু এবং শুধুমাত্র বর্তমানে যা ঘটছে আপনি সেগুলোকে অনুভব করছেন। তাহলে কি এই মূহুর্তে আপনার জিবনে কোনো কষ্ট দুঃখ যন্ত্রনা কোনো কিছু কি আছে? এবার ভাবুন কোনো যন্ত্র ছাড়াই যদি আপনি নিজেই এটা করতে পারতেন এবং এক মিনেট নয় বরং যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষনের জন্যই এটা করতে পারতেন। তাহলে জিবনটা কতই না সুন্দর হতো। এক্ষেত্রে অনেকেরই একটা ভুল ধারনার তৈরি হতে পারে। যে তাহলে কি আমরা আমাদের মেমোরিকে ব্যবহারি করবো না? না একদমই তা নয়। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রনটা সম্পূর্ন আপনার হাতে থাকবে। ঠিক ওই যন্ত্রের মত। অর্থাৎ আপনি যখন চাইবেন আপনার মনকে চুপ করিয়ে সরিয়ে রাখবেন আবার যখন দরকার পরবে তখন তাকে ব্যবহার করে অতিত থেকে শিখবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য লক্ষ তৈরি করবেন। কিন্তু ঠিক যতটা দরকার। অর্থাৎ তখন আপনি আপনার মস্তিষ্কের দাস নয় বরং আপনার মস্তিষ্ক আপনার দাসে পরিনত হবে।
এই সমস্ত কিছু শুনে আমাদের মাথায় একটাই প্রশ্ন আসবে যে সবই ঠিক আছে কিন্তু এই সমস্ত কিছু কি আদো সম্ভব? সম্ভব কি সম্ভব না তা অজস্র মানুষ এই বই পরে প্রমান করে দিয়েছেন। Eckhart Tolle তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। যে কোনো দক্ষতা অর্জন করার জন্য দরকার অভ্যাস। এ ক্ষেত্র্রেও তার কোনো বেতিক্রম নেই। Eckhart Tolle এরকই কিছু অভ্যাস গড়ে তুলার কথা নিজের বইতে উল্লেখ করেছেন। আপনি একটু গভির ভাবে কিছু সমাধান করার চেষ্টা করুন। দেখলেন মেজিক। যখনি আপনার মনযোগ এক দিকে পদার্পন করে তখন অন্য কিছু চিন্তা আমাদের মাথায় আসে না। তারপর আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন যে এর আপনি কি ভাববেন? এতে করে আপনার মস্তেষ্ক একই চিন্তাতে মগ্ন থাকবে। এভাবে আপনা একটা সুজোগ তৈরি হয় আপনার একা একা চলার মনটাকে ধরতে পারার। সম্পূর্ন ভাবে বর্তমানে উপস্থিত থাকার অনূভুতিটা এরকমই যেটা কথায় প্রকাশ করার মত না। ঠিক অনেকটা যেমন মাছকে জলে অস্তিত্ব বলে বুঝানো সম্ভব না। যেটা শুধু মাত্র অনুভুতির দ্বারা অনুভব করা সম্ভব। তাই বলা হয় চুপ করে থাকলেই সকল জিনিসের আনন্দ সঠিক ভাবে অনুভব করা যায়। যেমন কিনা চুপ না থাকলে সাউন্ট বা শব্দের কোনো অস্থিত্ব থাকতো না। তেমনই ভাবে মনকে বা মস্তিষ্ককে পরিচালনা করতে না পারলে জিবনের আসল অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না।
Unique Word
BANGLAJOB2024