ফ্রিল্যান্সিং মূলত কি?
যে মাধ্যমে আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে অনলাইনে কাজ করা যায় এবং সেই সকল কাজের বিনিময় অর্থ উপার্জন করা যায় তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে।
এখন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ পাওয়া যায় না। সকল বয়সের মানুষই এই সম্পর্কে জানে। দিনের পর দিন অনলাইন আয় বেড়েই চলেছে। ফ্রিল্যান্সিং মূলত একটি আত্মনির্ভর বা মুক্ত পেশা। এটি কোনো নির্দিষ্ট সময় বেধে মানুষ করে না। এখানে নিজের পছন্দ মত সময়ে মানুষ কাজ করে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং আছে বলেই বাংলাদেশে দিনের পর দিন বেকারত্বের হাড় কমছে। অনলাইন এই পেশার মাধ্যমে দিনের পর দিন মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে। চাকরির সাথে তুলনা করলে এটি চাকরির থেকেও ভালো উপার্জন মাধ্যম বলে বিবেচিত হবে। প্রযুক্তির প্রচারের মাধ্যমে এর প্রাদুরভাব বেরেছে প্রচুর।
প্রাচিন কাল থেকেই এই ফ্রিল্যান্সিং পেশার প্রচলন থাকলেও তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানের অভাবে মানুষ এই অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে জানতো না বললেই চলে। এই পেশার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা কে তুলে ধরে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা যায়। তাই ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি নিয়ে সকলের কৌতুহল কাজ করে।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত?
ফ্রিল্যান্সিং এক ধরনের পেশা যা মূলত অনলাইন ইনকাম হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটে যারা কাজ করে তাদের কে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়ে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। কিন্তু একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এর ইনকামও কম নয়। যেকোনো সফলতার পিছনের গল্প মোাটেও সহজ হয় না। প্রতিটা সফলতার পিছনে লুকিয়ে থাকে হাজারো কষ্ট এবং হাজারো পরিশ্রম। একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের স্ট্রাগলের গল্প সুনলে আপনি তাকে অবশ্যই লিজেন্ড বলে বাহবা দিবেন। মানুষ ২০ থেকে ২৫ বছর লেখা পরা করার পরে একটি চাকরির জন্য আশা করে চাকরি পেলেও তার মাসিক ইনকাম থাকে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের মাসিক ইনকাম এভারেজে লক্ষ টাকা মত হয়ে থাকে। একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় একজন বাংলাদেশি সফল ফ্রিল্যান্সারের ইনকাম থাকে দুই লক্ষ টাকা উপরে। এই জন্যই মূলত ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সহজ ও কার্যকারী ধাপ:
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কিছু সহজ ও কার্যকারী ধাপ রয়েছে। আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার এই সহজ ও কার্যকারী ৫ টি ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ধাপ নম্বর ১: যথাযথভাবে একটি স্কিল শিখুন:
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে যে কোনো একটা স্কিল খুব ভালো ভাবে শিখতে হবে এবং জানতে হবে। তাড়পড় আপনি ওই স্কিলটাকে সেল করে মার্কেট প্লেসে কাজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সকলের মাঝে যে কমন প্রশ্নটা দেখা যায় সেটা হলে আমি আসলে কোন স্কিলটা ভালো ভাবে শিখবো? এই ক্ষেত্রে আমি আপনাদের কিছু সাজেশন দিতে পারি।
প্রথম সাজেশন: যদি আপনারা ডাটা এন্ট্রি কিংবা রাইটিং বিষয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনাদের মাইক্রোসফ্ট অফিস, গুগোল ডক এবং সিট এই টাইপের জিনিসগুলো শিখতে হবে।
দ্বিতীয় সাজেশন: গ্রাফিক ডিজাইন যদি আপনি শিখতে চান তবে আপনাকে মিনিমাম এডোবি ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর এগুলো শিখতে হবে। যদি এইগুলো ঝামেলা এড়াতে চান তবে আপনাকে কেনভা দিয়েও সাধারন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজগুলো আপনারা শিখতে পারবেন।
তৃতীয় সাজেশন: ডিজিটালা মার্কেটিং করতে চাইলে আপনাদের প্রথমে যেটা শিখতে হবে তা হলো এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এই একটি শিখলেই আপনি অনেক কাজ পেয়ে যেতে পারেন। এটা ছাড়াও আপনারা অন্যান্য অপারেশনের কাজ গুলো শিখতে পারেন। যেমন ফেসবুক মার্কেটিং কিংবা ইনস্ট্রাগ্রাম মার্কেটিং কিংবা গুগোল এডস অথবা আপনার ওয়েব রিসার্চ করেও সাধারন ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন।
কোন একটি স্কিল কিভাবে শিখবো?
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসতে পারে যে ভাই আপনি তো স্কিল সাজেস্ট করলেন কিন্তু এই একটি স্কিল আমরা শিখবো কিভাবে? তাই সকলের মনের এই প্রশ্ন থেকে একটি স্কিল শিখার ৪ টি ধাপে আপনাদের সাথে সেয়ার করবো।
সহজ স্টেপ ১:- ডি কনস্ট্রাকশন:
ডিনস্ট্রাকশন মানে হলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা। ধরুন আপনি গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে চাচ্ছেন এবং আপনি গ্রাফিক ডিজাইনের মধ্যে তিনটা এরকম কাজ পেলেন যেই তিনটা পাট আপনি শিখলে মার্কেট প্লেসে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে পরিচিতি পাবেন। তাই ভাগে ভাগে কাজ অথবা ছোট ছোট করে ভাগ করলে আপনারা খুব সহজেই যে কোনো কাজ শিখে নিতে পারবেন।
সহজ স্টেপ ২:- র্লান দা ডি কনস্ট্রাকটেড পার্ট:
ছোট ছোট ভাগ করা বিষযগুলোকে শিখাই হলো এই স্টেপের মেইন কাজ। ধরুন যেকোনো বিষয় যদি এক টানা আপনাকে শিখতে বলা হয় তাহলে আপনার কাছে মনে হবে এটি আমার জন্য একদমি সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যদি ডি কনস্ট্রাকশন করে ফেলেন তাহলে আপনার মনে হবে যে আরে এই বিষয়টা তো খুবই সহজ। অল্প একটু সময় দিলেই আমি এটি পারবো। তাই ছোট ছোট ভাগ করা বিষয়গুলোকে ছোট ছোট করে শেখাই হলো আরেক টি সহজ মাধ্যম।
সহজ স্টেপ ৩:- শেখার যাত্রার সকল বাধার পরিহার করুন:
যেকোনো বিষয় শেখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যেই বিষয়টি রয়েছে তা হলো ফোকাস। তাই যখনি কিছু শিখতে যাবেন তখন অন্য কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়া যাবে না। সেটা যে কোনো ধরনের স্কিলই হোক না কেনো। এটি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে।
সহজ স্টেপ ৪:- অনুশীলন:
এর আগের তিনটি স্টেপে আপনি অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কিন্তু আপনি যেই বিষয়গুলো শিখলেন আপনি যদি সেই বিষয়গুলো অনুশীলন না করেন তাহলে আপনি সেইগুলো ভালো ভাবে মনে রাখতে পারবেন না। আপনার কাজগুলো তেমন স্ট্রং হবে না। আপনি যখনই অনুশীলন করা শুরু করবেন তখনই আপনি বুঝে যাবেন যে আপনি আসলে কতটুকু স্কিল পেয়েছেন। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ধাপ হলো অনুশীলন।
ধাপ নম্বর ২: কাজ সংক্রান্ত একটি পোর্টফলিও তৈরি করা:
পোর্টফলিও হলো এমন একটি পেজ যার মাধ্যমে আপনি এতদিন যেই কাজগুলো করেছেন সেগুলো কে নোট করে রাখা। আপনি যেই স্কিলটা জানেন সেটাকে ব্যবহার করেই মূলত আপনাকে এই পোর্টফলিওটা সাজাতে হবে। পোর্টফলিও নাম শুনলেই সকলের মনে যেই প্রশ্নটা আসে তা হলো ভাই আমিতো কোনো ক্লাইন্টের কাজ করিনি তাহলে আমি পোর্টফলিও বানাবে কি করে? সেক্ষেত্রে চিন্তার কোনো কারন নেই। আপনি যখনই একটা কাজ বা স্কিল শিখছেন তখন আপনি অনেকগুলো পজেক্ট করে থাকেন। সেই প্রোজেক্টগুলো দিয়েই কিন্তু আপনি একটি পোর্টফলিও তৈরি করে নিতে পারেন।
ধাপ নম্বর ৩: মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খোলা ও প্রোফাইল আবডেট করা:
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য যেই ৩ নম্বর ধাপটি আছে তা হতে পারে ফ্রিল্যাান্সিং করার একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ। আপনি যেই মার্কেট প্লেসে কাজ করতে চান সেটা হতে পারে ফাইবার, আপওয়ার্ক কিংবা ফ্রিল্যান্সার ডট কম। এই খানে আপনাকে একটি যথাযথ ভাবে একাউন্ট খুলতে হবে এবং সেই একাউন্টের প্রোফাইলটা আপডেট করতে হবে। আপনার যেই বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা আছে সেই গুলোর উপর ভিত্তি করে আপডিট করতে হবে।
ধাপ নম্বর ৪: ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট:
ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে আপনি যখন কাজ করলেন কাজের পর যেই ইনকাম টা হবে আপনি কিভাবে আপনার হতে পাবেন সেই সিস্টেম টাকে মূলত ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেম বলা যায়। বাংলাদেশ থেকে সাধারনত দুটি মাধ্যমে পেমেন্ট সিস্টেমটাকে ডেভোলপ করে নিতে পারেন।
নম্বর ১: বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক স্বীকৃত যে কোনো ব্যাংক। যারা ইন্টার ন্যশনাল পেমেন্ট নিতে পারে।
নম্বর ২: ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট কোনো সিস্টেম। যারা কিনা পুরো পৃথীবিতে এই পেমেন্ট সিস্টেম রাখে। যেমন হচ্ছে payonner, wise transfer ইত্যাদি।
ধাপ নম্বর ৫: স্কিল অনুযায়ী গিগ তৈরি করুন এবং ইউনিক প্রোপজাল লেটার লিখুন:
গিগ হচ্ছে একটি দোকানের মতো। যেখানে আপনি সাজিয়ে লিখে রেখেছেন আপনি ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো পারেন এবং কোন কাজের জন্য কেমন পেমেন্ট নিবেন। এটাই হলো মূলত গিগ। আর প্রোপজাল হলো ক্লাইন্ট যখন আপনাকে একটা কাজের কথা উল্লেখ করে তখন আপনি ক্লায়েন্টকে বুঝাবেন যেই লেটার টার মাধ্যমে যার মাধ্যমে ক্লায়েন্ট আপনার উপর কোনভেন্স হবে তাই হলে মূলত প্রোপজাল লেটার।
সবশেষে আমি বলতে পারি মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই বললেই চলে। যেকোনো বিষয়ে কঠোর পরিশ্রমের পরই মূলত সফলতা পাওয়া যায়। তাই ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে করতে হবে কঠোর পরিশ্রম। আর বাংলাদেশকে এই ফ্রিল্যান্সাররা করতে পারে বেকার মুক্ত। ধন্যবাদ।