মাথা ব্যথা:
মাথা ও ঘারের ব্যথাকে আমরা মাথা ব্যথা বলে থাকি। মাথা ব্যথা নেই বা হয়নি এমন মানুষ খুজেঁ পাওয়া মুসকিল। দৈনন্দিন জীবনে মাথা ব্যথার জন্য অনেকের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মাথা ব্যথা আমাদের সমাজে রোগ হিসেবে বিবেচিত বা পরিচিত হলেও এটি আসলে আদৌ কোন রোগ নয়। এটি কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র। মাথা ব্যথা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রায় দেরশো প্রকারের মাথা ব্যথার সমস্যা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে। প্রতিটি মাথা ব্যথার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। এক একটি মাথা ব্যথা এক একটি রোগের লক্ষন বহন করে। বেশির ভাগ সময় আমরা মাথা ব্যথা হলে গুরুত্ব দেই না। কিন্তু মাথা ব্যথা হতে পারে বড় কোনো রোগের লক্ষন। অতিরিক্ত মাথা ব্যথা আমাদের জীবনকে করে তুলতে পারে অনুর্বর। তাই সাধারন অবস্থায় মাথা ব্যথার কারন জানতে পারলে তা নিরাময় সম্ভব।
মাথা ব্যথার প্রকার ভেদ:
মাথা ব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে আমাদের মাঝে বিষেশত দুই প্রকারের মাথা ব্যথা বেশি দেখা যায়।
১) প্রাইমারি হেডিক। যেমন: ক্লাস্টার হেডেক, মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ হেডেক ইত্যাদি।
২) সেকেন্ডারি হেডিক। যেমন: গ্লুকোমার, সাইনোসাইটিস, মস্তিষ্কের টিউমার, স্ট্রোক ইত্যাদি।
মাথা ব্যথা হওয়ার সাধারন কারন সমূহ:
১) অনিয়মিত ঘুম কিংবা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।
২) অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া।
৩) অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা শারীরিক পরিশ্রম।
৪) ক্লান্তি অনুভব বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া।
৫) সর্দি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারনে।
৬) সাইনোসাইটিসে সমস্যা কিংবা মাইগ্রেনে সমস্যা।
৭) অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া কিংবা ঠান্ডা পানি পান করা।
৮) খাবার দ্রুত খাওয়া বা ক্ষুদার্থ থাকা।
৯) দাঁতের রোগ বা দাঁতে ব্যথার কারনে।
১০) ধুমপান,মদ্যপান এবং মাদকাসক্তি হতে পারে মাথা ব্যথার কারন।
মাথা ব্যথা হওয়ার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কারন গুলো নিয়ে আলোচনা:
নম্বর ১:মাইগ্রেন:
এই মাথা ব্যথার তীব্রতা বেশি হয়। সাধারনত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগ হওয়ার প্রবনতা বেশি দেখা যায়। ছোট থেকেই এই মাথা ব্যথা হতে পারে তবে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়স থেকে এই মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার প্রবনতা বেশি দেখা যায়। যা কিনা ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।
মাইগ্রেনের লক্ষনসমূহ:
১) এই মাথা ব্যথা এক টানা হয় না বরং থেমে থেমে হয়।
২) দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারে। সেটা হতে পারে ২ ঘন্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত।
৩) এই ব্যথা মাথার যেকোনো এক পাশে হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
৪) এই ব্যথা দিক পরিবর্তন করীও হতে পারে। একবার ডানে হলে একটু পর বামেও হতে পারে।
৫) ব্যথার তীব্রতা অধিক হয়। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে কেও হয়ত পিছন থেকে হাতুরি দিয়ে বারি দিচ্ছে।
৬) মাথা ব্যথার সাথে বমি হওয়া বা বমি করা।
৭) মাথার সামনের দিকের দুই পাশে রগ টান টান লাগা।
৮) শব্দে কিংবা আলোতে মাথা ব্যথা দ্বিগুন হয়।
৯) আলো থেকে দূরে থাকলে ব্যথার পরিমান একটু হলেও কমে।
১০) শারীরিক পরিশ্রমের ফলে এই ব্যথা হতে পারে।
মাইগ্রেনের ব্যথার কারনসমূহ:
১) ঘুমের অভাবের কারনে মাথার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২) শারীরিক পরিপাক প্রক্রিয়ার কারনে এই ব্যথা হয়।
৩) জেনেটিকাল হলে পারিবারিক বা বংশ গতও এই সমস্যা হতে পারে।
৪) মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালনে সমস্যা থাকলেও এই ব্যথা হতে পারে।
৫) অতিরিক্ত আলোতে থাকার কারনে ।
৬) অতিরিক্ত ল্যাপটপ, কাম্পউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে।
৭) অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে এই সমস্যা হয়।
৮) অতিরিক্ত রোদে বা গরমে থাকলে এই ব্যথা হওয়ার প্রবনতা বেশি হয়।
৯) অতিরিক্ত চা, কফি এবং কোমলপানিয় পান করার ফলে এই রোগ হয়।
১০) পানি কম খাওয়ার কারন ও হতে পারে এই মাথা ব্যথা।
মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিকারের উপায় বা চিকিৎসা:
১) নিয়মিত ব্যয়ামের চর্চা করা।
২) নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠা।
৩) অতিরিক্ত আলোতে কাজ না করা।
৪) দীর্ঘসময় যাবৎ ল্যাপটপ, কাম্পউটার এবং মোবাইল না ব্যবহার করা।
৫) ঠান্ডা পানি পান বন্ধ করা।
৬) অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষন না থাকা।
৭) উচ্চশব্দ থেকে দূরে থাকা বা এড়িয়ে চলা।
৮) প্রচুর পরিমানে পানি পান করা।
৯) চা, কফি এবং কোমলপানিয় জতটা সম্ভব বর্জন করা।
১০) চিকিৎসকের পরামর্শে মাথা ব্যথার ওষুধ সেবন করা।
নম্বর ২: ক্লাস্টার হেডিক:
এই ব্যথায় নারী কিংবা পুরুষ যে কোনো ব্যক্তিরই হতে পারে। এই ব্যাথা যে কোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে।
ক্লাস্টার হেডিকের লক্ষন:
১) এই ব্যাথা হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং বেশ মারাত্মক তীব্র হয়।
২) দিনে কয়েকবার এই ব্যথা হতে পারে। ৫- ১৫ মিনিট থেকে এই ব্যথা শুরু হলে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত এই ব্যথা স্থায়ী হতে পারে।
৩) সাধারনত এই ব্যথা চোখ থেকে মাথা বরাবর হয়ে থাকে ।
৪) চোখ লাল হওয়া, চোখ চুলকানো, চোখ দিয়ে পানি পরা এবং চোখের দৃষ্টি পরিবর্তন হওয়া।
৫) গন্ধ , শব্দে এবং আলোতে এই ব্যথা হয়।
ক্লাস্টার হেডিকের চিকিৎসা:
এই ব্যথার নির্দিষ্ট কোনো কারন বা চিকিৎসা নেই বললেই চলে। এই সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার গ্রহন যোগ্য। এই ব্যাথায় যেহেতু চোখের সমস্যা বেশি দেখা যায় তাই চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের ড্রপও ব্যবহার করা যেতে পারে।
নম্বর ৩: টেনশন টাইপ হেডেক:
সবচেয়ে কমন ও পরিচিত মাথা ব্যথা হলো টেনশন টাইপ হেডেক (TTH) বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা। আমাদের সকলের মাঝে কম কিংবা বেশি সকলের মাঝেই এই মাথা ব্যথা হওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের এই ব্যথা হয়ে থাকে।
টেনশন টাইপ হেডেকের লক্ষন:
১) সম্পূর্ন মাথা জুরে এই ব্যথা হয়।
২) তীব্রতা অল্প হলেও সবসময় থাকে এই ব্যথা।
৩) মনে হয় কেউ মাথায় ভারি কোনো কিছু রেখেছে কিংবা মাথা বেঁধে রেখেছে।
৪) সকালের দিকে এই ব্যথা থাকে না বললেই চলে।
৫) এই ধরনের ব্যাথা সবসময় থাকার প্রবনাতাই বেশি।
টেনশন টাইপ হেডেকের কারন:
১) ক্লান্তি থাকা ও ঘুমের ব্যঘাতের কারনে এই ব্যথা হতে পারে।
২) অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে এই সমস্যার তৈরি হতে পারে।
৩) পেশাগত চাপের কারনেও এই মাথা ব্যথা হতে পারে।
৪) পারিবারিক কলহ ও ঝগড়া বিবাদের চিন্তায় এই ব্যথা হতে পারে।
৫) পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে এই ব্যথা অনুভব হতে পারে।
টেনশন টাইপ হেডেকের প্রতিকার বা চিকিৎসা:
১) সঠিক সময় ঘুমানো এবং ঘুমের পরিমান ঠিক রাখা।
২) অতিরিক্ত মানসিক বা পেশাগত চাপ না নেওয়া।
৩) চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
নম্বর ৪: সাইনাস:
নাকের দুই পাশের হাড় ও কপালের দুই পাশের হাড়ের মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গা গুলোকে সাইনাস বলে। আর এ সাইনাসের জন্য মাথা ব্যথা ছোট থেকে বড় সকলের মাঝে দেখা যায়।
লক্ষন:
১)ঘন ঘন মাথা ব্যথা থাকা।
২) নাক বরাবর মাথা ব্যথা বেশি হওয়া।
৩) সর্দি, ঠান্ডা থেকে মাথা ব্যথা হওয়া।
৪) সব সময় জ্বর জ্বর লাগা।
৫) নাক বন্ধ থাকা, নাকের পলিপাসের সমস্যাও দেখা যায়।
সাইনাসের কারন:
১) অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশে বসবাস করা।
২) ধূমপান বা মদ্যপান করা।
৩) ধূলাবালিতে চলাফেরা করা।
নম্বর ৫: ক্রনিক ডেইলি হেডেক:
সেকেন্ডারি হেডেক এর সর্বপ্রথম সমস্যা হলো ক্রনিক ডেইলি হেডেক ।প্রতিদিনই চিন চিন করে মাথাব্যথা হওয়াকে ক্রনিক ডেইলি হেডেক বলে। সাধারনত দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকলেই এই মাথা ব্যথা কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম হলেও এই ব্যথা থাকে না।