যেভাবে আপেল তৈরি হলো গবেষণাগারে Lab Made Apple

যেভাবে আপেল তৈরি হলো গবেষণাগারে || Lab Made Apple

Health

ফল ও সবজি দ্রুত পচে যায় এমনকি  ফ্রিজেও বেশি দিন রাখা যায় না। এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত নানা গবেষণায়। সংরক্ষনের সময় বাড়াতে নানা গবেষনা করছে বিজ্ঞানীরা। সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বানিজ্যিক ভাবে লাভজনক জাত উদ্ভাবন করার লক্ষে কাজ করছে তারা। দীর্ঘ গবেষণার পর তারা একটি পরিচিত ফলের উপর সফল হয়েছেন। আর সেটা হলো আপেল। এই আপেলের সাথেই কাজটি করেছেন তারা। নাম দিয়েছেন কসমিক  ক্রিস্প। মিষ্টি স্বাদের আপেল এটা। এটার বিশেষত্ব হলো এটি রেফ্রিজারেটরে ১ বছরেরও বেশি সময় সংরক্ষন করা যায়। অবাক করা তথ্য হলো আপেলটি তৈরি করা হয়েছে ল্যাবরটরিতে।

৯০ এর দশকে আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেটে আপেল ভিত্তিক ইন্ডাষ্ট্রি ধ্বসের মুখে পড়েছিলো। সেখানে হাজার হাজার একর ভুমিতে চাষ করা রেড ডেলিসাস জাতের আপেল জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলো। বছরের পর বছর ধরে আপেলটি ময়দার মতো টেক্সচার আর সাদামাটা স্বাদ আর কেউ পছন্দ করছিলো না। আর বানিজ্যিক কারনে দীর্ঘ সময় আপেল এর সংরক্ষন প্রয়োজন ছিলো। ২০ বছর ধরে কসমিক ক্রিস্প আপেলের জাতটির উন্নয়ন চলে। তারপর ৩ বছর গাছে ফলিয়ে ফলটির আসল ফলন পাওয়া গেছে। আপেলটি ডেভেলপ করেছে ওয়াশিংটন স্টেটের একটি ফুড ট্রিড ব্রিডিং প্রোগ্রাম। ১৯৯৭ সালে প্রথম ফলটি উদ্ভাবনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। আপেলটির সাকের ‍দৃঢ় আর কিস্পি ট্রেক্সার চমৎকার মিস্টি স্বাদ একে একটি অসাধারন ফল করে তুলেছে।

কসমিক ক্রিস্প এর শেপ লাইফ রেড ডেলিসিয়াস এর দ্বিগুন। জাতটি তৈরি করতে ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে বলে জানা গেছে। এন্টারপ্রাইজ আর হানিক্রিস্প দুটি জাতের মধ্যে ক্রস ঘটিয়ে কসমিক ক্রিস্প আপেলটি তৈরি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবেই উচ্চ মাত্রার এসিডিটি আর মিষ্টি বৈশিষ্ট্য আনার জন্য ফলটির প্রজনন ঘটানো হয়েছে। ফলে এটি দিয়ে কোন খাবার তৈরি করার সময় কম চিনি ব্যবহার করলেই হবে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

তাদের মতে আপেলটি কাটলে প্রাকৃতিক ভাবেই খুব ধীরে ধীরে বাদামী হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ষ্ট্রোরেজে এর টেক্সার এবং স্বাদ বজায় থাকে। এর খোশাটি তারকা খচিত মহাকাশের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই এর নাম রাখা হয়েছে কসমিক ক্রিস্প।

ক্রস-হাইব্রিডাইজেশনের সফল উদাহরণ কসমিক ক্রিস্প আপেল। এ জাতটি ডেভেলপে আপেলের জিনোমে কোনো জিনগত পরিবর্তন আনা হয়নি। দুটি জাত ক্রসিং করার উদ্দেশ্য ছিলো এমন একটি আপেল তৈরি করা যাতে এন্টারপ্রাইজ জগতের বাজারে আপেলের বাদামী এবং রোগ প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য এবং হানি ক্রিস্প এর মিষ্টি বৈশিষ্ট্যকে এক জায়গায় আনবে। উদ্যোগ সফল হয়েছে। একে পরিপূর্ণ আপেল বলা হচ্ছে।

কসমিক ক্রিস্প আপেলের উদ্বাবোন প্রচুর ট্রায়াল এবং ইরোর এর ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছিলো। এগুলোর ফল নানা ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মাত্র দুটি গাছের আপেলে কাঙ্খিত ক্রিস্পি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। সেগুলোর বিজ থেকে গাছ হয়ে ফল পেতে সময় লাগে চার বছর। এরপর ১১ বছর ধরে চলে হাজারো পরীক্ষা নিরীক্ষা আর মূল্যায়ন। আকার আকৃতি ক্রান্চিন্যাজ জুসিন্যাজ সবই পরীক্ষা করা হয়। বছরের বিভিন্ন সময়ের ফল এক করে বের করা হয় কোন বয়সের ফলটি খেলে বেশি মিষ্টি লাগবে। কিন্তু বাজারে এতো আপেলের জাত থাকতে নতুন আপেল কিভাবে জায়গা করে নিবে? ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে শুধু ফলটির মার্কেটিংয়েই। ওয়াশিংটন স্টেট এর যে সকল আপেল চাষীরা ফলটি উদ্বাবোনে সহায়তা করেছেন তাদেরকে ফলটি উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিলো। প্রিমিয়াম কোয়ালিটি কসমিক ক্রিস্প আপেল প্রতি পাউন্ড ৩ থেকে ৫ ডলারে বিক্রি হয়। দুই দশক পর দুই হাজার বিশ সালে উদ্বাবনকারীরা অনেক পুরষ্কারও পেয়েছে। 

Thanks For Visit Our Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *