একবার কি হলো পরিক্ষার আগের দিন রাতে পড়তে বসে বুদ্ধরাম দেখল যে রাত পেরুলেই কাল পরীক্ষা এখনও এতগুলো চেপ্টার পড়া বাকি। এই বলে তারপর সারা রাত জেগে পড়ে পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি পরিক্ষা দিতে পৌছে পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রথমত তো বেশিরভাগ জানা জিনিস এরও উত্তর বুদ্ধরাম কিছুতেই মনে করতে পারলো না আর তাড়পড় এক সময় উত্তর লিখতে লিখতে আর না থাকতে পেরে বুদ্ধরাম পরীক্ষার হলের মধ্যেই খাতার উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। বুদ্ধরামের মতই আমরা যখন জীবনে কোনরকম চাপের মধ্যদিয়ে যাই বা কোন কিছুতে সফলতা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে উঠি তখন যেই জিনিসটাতে আমরা সবার আগে কম্প্রমাইস করি সেটা হলো আমাদের ঘুম। কিন্তু সুইডেনে ৫ হাজার জন লোকের উপর সুইডিস সাইকোলোজিস্টরা ২০০৮ এবং ২০১০ সালে মোট দুবার একটা সারভে কনডাক্ট করে এবং সেই রির্সাচ রির্পট থেকে এটা দেখা যায় যে ঘুমের সাথে সফলতার একটা সরাসরি যোগ রয়েছে। যারা ঘুমের অভাবে ভুগে তাদের জীবনে সফলতা পাওয়ার হার তাদের তুলনায় অনেক কম যারা কিনা প্রতিদিন নিয়ম করে কম করে হলেও ৭ থেকে ৯ ঘন্ট ঘুমান।
বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যক্তিদেরও তাদের সফলতার জন্য নিয়মিত রাতে ৮ ঘন্টা করে ঘুমানোকে গুরত্ব দেওয়ার কথা বলতে শুনা যায়। তাহলে জীবনে সফলতার জন্য নাকে তেল দিয়ে ঘুমতে হবে। এটা শুনে আপনি হয়ত বলতে পারেন সে কি এত দিন তো শুনে এসেছি সফলতা পেতে হলে চোখের ঘুম উরিয়ে রাত দিন এক করে পরিশ্রম করতে হবে। আর আজ আপনি উল্ট টা বলছেন। উল্টটা শুধু আমি বলছি না বিভিন্ন গবেশনা থেকে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা এই একই কথা বলছে। আসুন যেনে নেই এই মতামতের পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা গুলো:
নম্বর-১:অনুপ্রেরণা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি:
আমাদের মস্তিষ্ক পূর্ন ক্ষমতায় কাজ করতে পারার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় সেটার যোগান আসে মূলত গ্লোকজ থেকে। আর ঘুমের ঘাটতি হলে আমাদের মস্তিষ্ক হতে সেই গ্লোকজ এর সরবরাহ হতে সেই গ্লোকজের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে আমরা ক্লান্ত অনুভব করতে শুরু করি এবং কোন কাজ করার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলি। যেটা আমাদের প্রডাক্টিভিটি অর্থাৎ কর্ম ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই জীবনে সফলতা পাওয়ার জন্য জরুরি অনুপ্রেরনা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে চাইলে তার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
নম্বর-২:আরও সুষম মেজাজ:
আপনি হয়তো লক্ষ করে থাকবেন বাচ্চাদের ঘুমের অভাব হলেই তারা কাদঁতে শুরু করে এবং খীটখীটে হয়ে উঠে। তখন তাদের আর কিছুই ভালো লাগে না। এটা শুধু বাচ্চা দের ক্ষেত্রে নয় বড় দের সাথেও সমান ভাবে এই একই কাজ হয়ে থাকে। ঘুমের অভাব হলে আমরা অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলিে এবং খীটখীটে হয়ে উঠি। তখন অফিসে কারোর উপর মাথা গরম করে উল্টা পাল্টা কিছু একটা বলে দেওয়াতে বা সবার সাথে খীট খীটে ব্যবহার করাতে সেটা সফলতায় বাধা হয়ে দারাতে পারে। এমন কি বাড়িতে প্রিয়জন দের সাথেও রাগারাতগী করাতে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে উঠে। অন্য দিকে পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে সুষম মেজাজ বজায় থাকায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আসা চেলেন্জ গুলোকে আমরা সঠিক ভাবে ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলা করতে পারি। যেটা আমাদের সফলতায় এক বিশাল গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।
নম্বর-৩:শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করুন:
ঘুমের ঘাটতি আমাদের শরীরে করটিসল নামের একটি স্ট্রেস হরমনের ক্ষরনকে বারিয়ে তোলে। যেটা আমাদের হৃদপিন্ড কে অতিরিক্ত সজাগ রাখে এবং বিভিন্ন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ার সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলে। পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে আমাদের হৃদপিন্ড পর্যাপ্ত রেস্ট পাওয়াতে বহু বছর অব্দি শক্তিশালী ভাবে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ঘুমের ঘাটতি আমাদের রোগ প্রতি রোধ ক্ষমতাকেও ভিশন ভাবে কমিয়ে দিতে থাকে। যার ফলে সর্দি কাশি থেকে শুরূ করে ক্যন্সাররের মত ভয়াবহ রোগের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। ঘুমের অবাবের কারনে বেশিরভাগ দিন যদি অসুস্থ থেকে কাজ বা পড়াশুনা থেকে ছুটি কাটাতে হয় তাহলে সেটা যে আমাদের সফলতার পথে বাধা হয়ে দারায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শারীরিক অসুস্থতাকে তারিয়ে প্রতিটা দিনকে সফলতার পিছনে কাজে লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের সবার আগে দরকার।
নম্বর-৪:একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা:
বাজারে এসে গেল নতুন ওজন কমার জিনিস। নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমান আর মেদ ছারান। শুনতে হাস্যকর লাগলেও এটাই সত্যি। হ্যা এটা ঠিক যে ৮ ঘন্টা ঘুমালে আপনার ওজন কমে যাবে না কিন্তু এটাও ঠিক যে ৮ ঘন্টা ঘুমালে আপনার ওজন বারার সম্ভাবনা অনেক খানি কমে যাবে। কিভাবে যানেন? এই চমৎকারের পিছনে রয়েছে ২টা হরমন।
১-:ঘেরলিন ও
২-:লেপটিন।
ঘুমের ঘাটতি থাকলে আমাদের শরীরে ঘেরলিন হরমনের ক্ষরন বাড়তে থাকে। যেটা খিদের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলে। আবার ঘুমের ঘাটতি থাকলে লেপটিন হরমনের পরিমান কমে যেতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের পেট ভরে গেলেও আমরা অনুভব করতে পারি না। ফলে এই ২ টি ঘটনা এক সাথে করে আমরা ক্ষিদের অনুভতি না মেটার কারনে আমরা ক্ষুদা মন্দায় ভুগি এবং বেশি খেয়ে ফেলি।এটা আমাদের ওজন বাড়িয়ে তুলে। যার ফলে আমাদের উচ্চরক্ত চাপ, ডায়াবেটিকস,হৃদরোগ,সঞ্চালন সমস্যা ইত্যাদি রোগের মত বিভিন্ন ভয়াবহ সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ওজন আমাদের নিজের কর্ম ক্ষমতার উপরও প্রভাব ফেলে। যার ফলে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যার তৈরি হয়। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের কোন বিকল্প নেই।
নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের এই সমস্ত সফলতার পিছনে বিশেষ ভূমিকা বা অবদান বজায় রাখে। তাই সবসময় মনে রাখবেন ঘুমের পিছনে সময় দেওয়া মানে সময় নষ্ট করা নয় বরং সফলতার জন্য সময় ইনভেস্ট করা। সফলতার পিছনে ঘমের কোন বিকল্প নেই। আর সুষম সাস্থ বজায় রাখতে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ন। কথাই আছে সাস্থই সকল সুখের মূল। তাই সফলতা ও সুসাস্থের জন্য ঘুম মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য।