খাবা হজম করতে না পারলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয়।দেখা দিতে পারে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাসিডিটি, স্থুলতা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, লিপিড প্রোফাইল বেড়ে যাওয়ার মত নানা ধরনের সমস্যা। শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে হলে হজমক্রিয়া যেন স্বাভাবিক থাকে সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।খাওয়ার পাতে কিছু স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও কয়েকটি কৌশল মেনে চললেই হজমের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজেই। পেটে কোনো সমস্যা হলেই আমরা দৌড়ে পাশের ওষুদের দোকান থেকে গ্যাসটিকর ওষুধ কিনে খাই। কিন্তু আমরা একটু ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করলেই আমরা আমাদের চারপাশে এমন অনেক উপায় খুজে পাব যেগুলো কিনা আমাদের দীর্ঘদিনের হজমের সমস্যার খুব সহজ সমাধান করে দিতে পারে। অনেক সময় আমাদের ভিতর অনেক লুকাইত অসুখ রয়েছে যা হজম শক্তি না হওয়ার একটা বড় কারন হতে পারে। তাই আগে হজম না হওয়ার কারনগুলো খুজে বের করতে হবে।
হজম না হওয়ার কারন:
১) প্যানক্রিয়াস নামের এক ধরনের অঙ্গ রয়েছে যাতে ইনফেকশন হলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না।
২) খাওয়ার সময় খুব দ্রুত খাওয়া শেষ করা। সঠিকভাবে চিবানোর অভাবে হজমে সমস্যা হতে পারে।
৩) পাকস্থলীর কোনো অসুখ, খাদ্যনালির গঠনগত কোনো ত্রুটি, মাত্রাতিরিক্ত এসিডিটির সমস্যা, অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য এবং একসঙ্গে অনেক বেশি খাওয়া খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার অন্যতম কারণ।
৪) নিয়মিত রাত জাগা , মানসিক অবসাদ,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা , সঠিক সময়ে খাওয়ার অভাব, খাবারে অতিরিক্ত তেল-মসলা খাওয়া, তৈলাক্ত চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
৫) হঠাৎ করে খুব বেশি পরিমাণে খাবার নিয়ন্ত্রণ করা, দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকার পর একসঙ্গে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা এই সব কারনেও হজমে সমস্যা হতে পারে।
৬)মাদকদ্রব্য, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি, পান, সুপারি, গুল, জর্দা প্রভৃতি হজমশক্তি দুর্বল করে।
৭) রক্তে চিনির মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হজমশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
৮) কিডনিতে পাথর, গলব্লাডারে পাথর, খাদ্যনালির অপারেশনের পর হজমে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৯) দীর্ঘ বছর ধরে বদহজমের সমস্যা,খাবারে প্রচণ্ড পরিমাণে অনিয়ম, কৃমির আক্রমনের কারনেও হজমে সমস্যা হয়।
১০) বিভিন্ন ধরনের অ্যানটিবায়টিক ওষুধ সেবনের ফলে হজমে সমস্যা হয়।
হজম সমস্যা সমাধানে সারাদিন করনীয়:
ব্যায়াম: হজম শক্তি বাড়াত ব্যায়ামের ভূমিকা অপরীসিম। তবে সব ধরনের ব্যায়াম হজম শক্তি বাড়ায় না। হজম শক্তি বাড়াতে হলে শরীরের মাঝের অংশের কর্মকান্ড বাড়াতে হবে। যেমন:শরীরের ওপরের অংশ একদিকে এবং নিচের অংশ আরেক দিকে থাকে সে ক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়,স্পট জগিং বা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি জগিং করা যায় বা হালকা করে লাফানো এই ধরনের ব্যয়াম হজমের জন্য খুবই উপকারী।শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়া কতটা ভালোভাবে কাজ করবে তা অনেকটাই নির্ভর করে যে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ আছে কি না তার ওপর। নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। যাতে হজম সহজ হয়।
খাবার: হজম শক্তি বারানোর মূল উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবার এর তালিকা বজায় রাখা। নিয়মিত এবং সময় মত খাবার খাওয়া। রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে দেড় ঘন্টা আগে খাবার খাওয়া শেষ করা। মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা থেকে বিরত থাকা। চাইলে খাওয়ার পর লেবুপানি খেতে পারেন। এটি আপনার হজমের জন্য খুবই উপকারী।
ঘুম: রাত জাগার ফলে হজম ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে। রাতে অক্সিজেন কম থাকার কারনে ফুসফুসের বেশির ভাগ অঙ্গ অব্যবহৃত থাকে। আর জেগে থাকার কারনে মানুষের সব অঙ্গ কাজ করে ফলে আরও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। যা হজম ক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে থাকে। এ কারণেই হজমশক্তিকে বাড়াতে হলে বা একে বেশি কর্মক্ষম করতে হলে রাতে ঘুমানো জরুরি।
হজমশক্তি নিয়ন্ত্রনের উপায়:
১) অতিরিক্ত তেল চর্বিজাতীয় খাবার এবং কোমল পানীয় পরিহার করুন।
২) নিয়মিত প্রচুর পানি পান করুন। তবে মূত্র নলী এবং কিডনী রোগীদর পানির কাখাওয়ার ক্ষেত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) একবারে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
৪) হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ নয়।
৫) খাবার সময় মনোযোগ দিয়ে খান।
৬) এক বারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭) খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমাবেন না।
৮) সব ধরনের মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকুন। ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় সকল মাদক দ্রব্যকে না বলুন।
৯) সকাল ও বিকেল দুই বেলা করে নিয়মিত হাঁটা চলা করুন।
১০) উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন। যে কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হজমশক্তি বাড়াতে ১০ টি ঘরোয়া উপায়:
১) হজম সমস্যা দূর করার একই বড় উপায় হলো হলুদ। এক টুকরো হলুদ আপনাকে দিতে পারে শান্তি বা স্বস্তি।
২) আপেল সিদ্ধ করে সেই রস নিয়মিত খেলে বদহজম দূর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৩) গ্রিন টি বা পুদিনা পাতার চা এ থাকা অন্টি অক্সিডেন্ট বদহজম দূর করতে সাহায্য করে।
৪) পেঁপে পাতা হজমের ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে পাতা সিদ্ধ করে পান করলে হজমের সমস্যা দূর হবে।
৫) ক্যালসিয়াম জাতীয় অর্থাৎ দুধ খান। এটা আপনার হজম ক্রিয়ায় সাহায্য করবে।
৬) খাবারের সঙ্গে লেবু রাখতে পারেন। লেবু খুব সহজে খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
৭) দই হজমের জন্য খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম ও প্রোটনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি হজমে সাহায্য করে।
৮) জিরার গুড়ো পানিতে মিশিয়ে গরম করে খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। এলাচে ঝাঁজ থাকলে নিয়মিত চিবিয়ে খান। দেখবেন অনেকটাই হজমশক্তি নিয়ন্ত্ররন এসেছে।
৯) নিয়মিত শাকসবজি, ফল, সালাদ, চিয়া সিড, ইসবগুল খেতে পারেন।এগুলো হজমের জন্য খুব উপকারী।
১০) খালি পেটে উষ্ণ গরম পানি পেটের সমস্যা দূর করে। ফাপা ফাপা ভাব দূর করে।
উপসংহার:
চিকিৎসকদের মতে, খুব বেশি ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়লে একটা সময়ে ওষুধ ছাড়া হজম করাই মুশকিল হয়ে পড়বে। হজমের সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। কোনো এক দিন একটুবেশি খেয়ে ফেললেই বা খাবারে যদি এক দিন তেল মসলার পরিমান বেশি হয়ে যায় সেদিনি আমাদের দরকার হয় র্ফামেসির বিভিন্ন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে ঘন ঘন গ্যাস-অম্বলের ওষুধ নানা ক্রনিক অসুখকে ডেকে আনে। হতে পারে ক্যান্সার সহ আরো অনেক র্দূলভ রোগ ব্যধিও। তাই সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উপায়ে হজম ক্ষমতা বাড়ানো ও হজম উপযোগী খাবার খাওয়াই প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে উপরের আলোচিত বিষয় বা সমাধানগুলো খুবই উপযাগী।