পড়াশোনা করতে কার ভালো লাগে? এতো সুন্দর মোবাইল ফোন যার ভিতর এতো এতো সুন্দর মজার জিনিস রয়েছে সেটাকে দুরে সড়িয়ে রেখে এই মোটা মোটা বই থেকে এতো বড় বড় সুত্র মুখস্ত করতে কারোরই ভালো লাগে না। কিন্তু লেখাপড়াটা আসলে এতোটাও রসকস বিহীন হওয়ার কথা না। কিছু এমন পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো অনুসরন করলে লেখাপড়াকেও মজার করে তোলা সম্ভব। কিছু এমন ছাত্র ছাত্রী থাকে যাদের টপার বা বই পোকা বলে থাকি। তারা কিভাবে পড়াশোনা করে যে তারা সব সময় ভলো মাকর্স পায়। সেই বিষয়টা উদঘাটন করার জন্যই আমি কিছু দিন যাবত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের টপারদের ইন্টারভিউ দেখছিলাম যে, তাদের পড়ালেখার প্যাটার্ন খুজে বের করে তোমাদের সাথে শেয়ার করতে পারি। আর আজ আমি তোমাদের সাথে এই পোষ্টের মাধ্যমে সেই সব টপারদের পড়ালেখার মজার টেকনিক গুলো শেয়ার করবো। তাই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন আর শিখে নিন মজার মজার ট্রিকস।
প্রেকটিস মক টেস্ট-১
আপনি মানেন আর না মানেন আমাদের সমাজে মার্কস আর গ্রেড পয়েন্ট দেখেই স্টুডেন্ট বিচার করা হয়। চাকুরির ক্ষেত্রে যেমন বেতন, আবার ক্রিকেট খেলার ক্ষেত্রে যেমন এভারেজ স্কোর করা, ঠিক তেমনেই পড়ালেখার ক্ষেত্রে এই নম্বরই প্রধান হয়ে দাড়িয়েছে। যেহেতু নম্বরই সব কিছুর মুল তাই প্রাকটিসের কোনো বিকল্প নেই। কেউ যতই পরুক বা যতই যানুক না কেন সে যদি ওই পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ে লিখে না দিয়ে আসতে পারে তাহলে সব তার জানা থেকেও কোনো কাজ নেই। তাই যতক্ষন না আপনি ওই নির্দিষ্ট সময় ধরে কলম খাতা নিয়ে প্রেকটিস না করছেন ততক্ষন আপনার পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ে ভালো কিছু করতে পারা ভিসনই কষ্টের। তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে যত সম্ভব মক টেস্ট প্রেকটিস করা টা খুবই গুরুত্বপূর্ন। টপারদের মতে পূর্বের বছরের প্রশ্নগুলো দিয়ে মক টেস্ট হিসাবে প্রেকটিস করলে সেটা পরীক্ষায় ১০০% দিয়ে লিখতে সব থেকে বেশি সাহায্য করে। কারন পূর্বের বছরের প্রশ্ন দেওয়াতে প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো রকম ধারনা চলে আসে। আর তার সাথে সাথে সময় ধরে প্রেকটিস করায় কোন প্রশ্নের পিছনে ঠিক কতটুকু সময় দেওয়া উচিত সেটাও পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে যায়। এ ছারা পূর্বের বছরের প্রশ্ন প্রেকটিস করার সময় একটু ভালো করে খেয়াল করলে লক্ষ করতে পারবেন যে কিছু এরকম প্রশ্ন রযেছে যেগুলো প্রায় প্রতিবারই রিপিট হয় বা যে টপিক গলোর ব্যপারে জিঙ্গেস করা হয়। আপনার কাজ হলো সেই প্রশ্ন গুলোকে র্মাক করে সেই প্রশ্ন বা সেই চেপ্টার গুলো নিয়ে স্টাডি করা। কারন সেগুলো এইবারের পরীক্ষায় হয়তো আসতে চলেছে। যদি আপনার ভাগ্য ভালো হয় তাহলে হয়ত একদম সেই প্রশ্নই রিপিড হয়ে যেতে পারে। মক টেস্ট প্রেকটিস করায় আপনার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আপনার প্রস্তুতি আসলেই কি অবস্তায় রয়েছে।
ভালো উপস্থাপনা-২
আপনি মানুন কি না মানুন আপনার পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপনার উপর অনেক খানি নাম্বার নির্ভর করে। আপনি হয়তো একটা উত্তর লিখলেন যেটাতে আপনার লেখা অনুযায়ী ৮ নম্বর পাওয়া উচিত। কিন্তু যদি আপনি পরিষ্কার হাতের লেখা বা পেরাগ্রাফ করে না লিখেন তাহলে হয়তো আপনি ৪ নম্বরই নাও পেতে পারেন। কারন আপনি যদি একজন এক্সামিনারের দিক থেকে ভেবে দেখেন তাহলে বাজে হাতের লেখায় এলো মেলো ভাবে লেখা একটা উত্তরে আপনি খুব বেশি মার্কস দিতে নিশ্চই চাইবেন না। যেহেতু তারা শুধু মাত্র আপনি খাতায় কি লিখেছেন সেই অনুযাই বিচার করবে তাই আপনি আসলেই কতখানি বুদ্ধিমান তা কোনো মেটার করে না। শুধু মাত্র আপনি খাতায় কি লিখেছেন এবং সেটা কতখানি সঠিক বা বোধগম্য হয়েছে সেই অনুযায়ী আপনি র্মাস পাবেন। যেহেতু তাদের অনেক কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলো খাতা দেখতে হয় তাই তারা আশা করেন যে আপনি খাতায় পরিষ্কার করে গুছিয়ে উত্তর লিখবেন। যাতে সহজেই কম সময় সেটা পরে বুঝা যায়। কি লিখছেন তার সাথে সাথে কিভাবে লিখছেন সেটাও খেয়াল রাখাটা ভিশন জোরুরি। চলুন টপারদের সেয়ার করা কিছু টিপ্স দেখে নেওয়া যাক যাতে আপনি আপনার খাতার উপস্থাপনাটাকে উপরের লেভেলে নিয়ে যেতে পানরেন।
নম্বর-১: ঠিক যতটুকু এবং যা জানতে চেয়েছে সেইটুকুই উল্লেখ করে সংক্ষেপে উত্তর লিখুন।
নম্বর-২: উত্তরের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ন শব্দ গুলোকে চাইলে আনডার লাইন করে দিতে পারেন। কিন্তু একটা উত্তরে ৪ থেকে ৫ টার বেশি আনডার লাইন না করাই ভালো।
নম্বর-৩:সম্ভব হলে উত্তর সবসময় পয়েন্ট করে লেখার চেষ্টা করবেন।
নম্বর-৪:প্রতিটা উত্তর শেষ হওয়ার পর এক কি দুই লাইন জায়গা ফাকা রেখে তারপর পরের প্রশ্নের উত্তরটা লিখতে শুরু করুন।
নম্বর-৫:যদি কোনো প্রশ্ন ৪ র্মাক থেকে বেশি নম্বরের হয় তাহলে একটা নতুন পৃষ্ঠা থেকে উত্তরটা লিখতে শুরু করুন। কেনো পেজের শেষের দিক থেকে প্রশ্নের উত্তর শুরু না করাই ভালো।
নম্বর-৬: হাতের লেখা পরিষ্কার এবং স্পষ্ট রাখার চেষ্টা করুন।
সামন্জস্য-৩
যদি আপনি কোনো কাজে সামন্জস্য না রাখেন তাহলে লাইফে কোনো কিছুতেই আপনি বড় কিছু অর্জন করতে পারবেন না। একি ভাবে যদি আপনি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চান তাহলে তার জন্য দরকার পড়াশোনাতে সামন্জস্য থাকা। টর্পাসরা প্রতি দিন অল্প অল্প করে পড়ে। অন্তত পক্ষে এক ঘন্টা রোজ। তারা পরীক্ষার চাপ আশা অব্দি বসে থাকে না। যার ফলে তাদের ব্রেন রোজ রোজ অল্প অল্প করে মাতার মধ্যে নিয়ে নেয়। আর পরীক্ষার আগে তাদেরকে শুধু একবার করে পড়াগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে হয়। বাকিটা তাদের ব্রেন অটমিটিকালি করে নেয়। যদি আপনি প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়তে থাকেন তাহলে পড়া গুলা প্রতিদিন একটু একটু করে স্টোর হয় যার ফলে ব্রেন খুব সহজেই সেগুলোকে ধরে রাখতে পারে। আর এর ফলে পড়া গুলো বুজতেও অনেক সুবিধা হয়। আর শেষ মূহুর্তের নাকে মুখে পরার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বছরের শুরুর দিকে এক কি দুঘন্টা পরলেই যথেষ্ট। কিন্তু বছরের শেষের দিকে সেটাকে হয়তো একটু বাড়াতে হতে পারে। সামন্জস্য না থাকলে পড়াশোনায় সফলোতা আসে না। কারন মনে রাখবেন “সফলতা হলো ছোট ছোট কাজ গুলো নিয়ম মেনে প্রতিদিন করার ফল”।
প্লানিং-৪
শুধু পড়াশোনার জন্লায নয় লাইফে যেকোনো কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য দরকার প্রোপার প্লানিং। প্রতিটা টর্পাস দেরই নির্দিষ্ট প্লানিং থাকে সিলেবাস টাকে সময়ের মধ্যে শেষ করার। যেকোনো টপার এর কাছে শুনলেই আপনি সেটা জানতে পারবেন। যদি সে সঠিক ভাবে উত্তর দিতে রাজি হয়। প্রতিটি অর্জনকারীরই নিজস্ব প্লানিং থাকে। বাকি সবার মত টর্পাস দেরও কিছু দুর্বল সাবজেক্ট থাকে। কিন্তু তারা সেটার উপর রেগুলার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। তারা সেই সাবজেক্টার জন্য আলাদা করে সময় দিতে থাকে।তো চলুন এবার টর্পাস দের দেওয়া কিছু টিপ্স নেওয়া যাক যেগুলোকে ফলো করে আপনি চাইলে নিজের জন্য একটা স্টাডি প্লানিং বানাতে পারেন।
নম্বর-১: সেট এর্লাম:-প্রতিদিন সময় মতো পড়তে বসার জন্য এর্লাম ব্যবহার করুন। যাতে আপনি আপনার প্লানটা রেগুলার ফলো করতে পারেন।
নম্বর-২: ওয়াল প্লেনার:আপনার স্টাডি প্লানটা একটা বড় কাগজে লিখে সেটা আপনার ঘরের কোনো একটা দেওয়ালে লাগিয়ে রাখুন। যাতে চলতে ফিরতে সেটা আপনার চোখে পরে।
নম্বর-৩:মেক টু ডু লিস্ট:-প্রতি সপ্তাহের একটা লিস্ট বানিয়ে নিন। যে এই সপ্তাহে আপনাকে ঠিক কতটুকু পড়া শেষ করতে হবে।
নম্বর -৪:সেট টাইম লিমিট:প্রতিটা কাজের জন্য একটা করে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করা উচিত। চেষ্টা করুন একটা পড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে।
ডিসট্রাকশন বন্ধ করা (বিরক্তিকর জিনিস থেকে দূরে থাকুন)-৫
এই যে এ্যাপ গুলো ইমু, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ এদের কিছু আসে যায় না যে আপনি পরীক্ষায় পাশ করলেন না ফেল করলেন। তারা শুধু তাদের ব্যবসা করছেন। হিউম্যান সাইক্লোজিকেল কে কাজে লাগিয়ে তারা আপনাকে নেশাগ্রস্থ করছে। আমি একদমই এটা বলছি না যে সোস্যাল মিডিয়া একদমই বন্ধ করে দিতে। হয়তো সেটা বর্তমানে আপনার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু নিশ্চয় আপনি জীবনে যেটা হতে চান সেটার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাও যদি পড়ার সময় ফোনটা ২, ৩ ঘন্টা বন্ধ রাখলে আপনি হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কল মিস করে ফেলবেন তাহলে তাকে কল করে আপনি তাকে জানিয়ে দিতে পারেন যে পরবর্তী দুই তিন ঘন্টা আপনার ফোন বন্ধ থাকবে অথবা ডি এন্ড ডি (ডু নট ডিসটার্ব) মুড অন করে রাখতে পারেন। শুধু একবার ফোনটাকে বন্ধ করে পড়ার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেই পার্থক্য টা বুঝতে পারবেন। আপনার মন হয়তো বলবে একবার অন্তত ফোনটা খুলে দেখতে যে যদি হয়তো দরকারী কোনো নোটিফিকেশন হয়তো এসেছে। কিন্তু আপনাকে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। তাহলে আপনার মন আপনাকে নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে দিবে। একবার যদি আপনি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখে যান তাহলে জীবনে সফল হওয়া থেকে আপনাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।
বেশ এই টুকুই আপনার জন্য আমার তরফ থেকে। এখন আপনার পালা এই পয়েন্ট গুলো পড়ে নিয়ে ভালো ভাবে বুঝে কাজে লাগানো। কিছু অন্তত আপনাকে কাজে লাগানো দরকার।
ধন্যবাদ।