চাকরি পেতে হলে কিছু দক্ষতা থাকা জরুরি। চাকরি পেতে হলে যেসব দক্ষতাগুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি তার মধ্যে কিছু দক্ষতা হলো কমিউনিকেশন স্কিল, প্রবলেম সলভিং স্কিল,এডাপটেশন স্কিল, কোঅপারেশন স্কিল ইত্যাদি আরো অনেক দক্ষতা। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রতিটা ব্যক্তির জীবনে কর্মস্থলে প্রবেশের ধাপটা মোটেও সহজ বিষয় নয়। আর এই গুরুত্বপূর্ন ধাপটি মানুষের জীবনে একবার হলেও আসে। পছন্দের চাকরি পেতে শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকাই যথেষ্ট নয় প্রয়োজন পরে কিছু সাধারন দক্ষতার। চাকরির নিয়োগকারীরা একজন চাকরি প্রার্থীর শুধু জীবনবৃত্তান্ত দেখে না এর সাথে সাথে ব্যক্তির অন্যান্য বিষয়গুলোর উপরও নজর দেন।প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির বাজারে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। যা কিনা একজন ব্যক্তির সাথে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। একে সফট স্কিল বলে আখ্যায়িত করা যায়। প্রায় সকল ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগকারী চাকরি প্রার্থীর এই সফট স্কিল এর প্রতি নজর আরোপ করে থাকেন। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য যেসব দক্ষতা থাকা জরুরি তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর। তাই চাকরি প্রার্থীকে এমন কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি যা কিনা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির যেকোনো পদের জন্য উপযোগী হয়।
আজকের আলোচনায় থাকবে চাকরি পেতে হলে যেসব দক্ষতাগুলো থাকা জরুরি। যাতে আপনার চাকরি অনুসন্ধানে সহযোগীতা করতে পারে এবং পরবর্তীতে ক্যারিয়ার বিকাশে সহযোগীতা হয়।
চাকরির দক্ষতা মূলত কি?
বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান, স্কিল ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকাই হলো মূলত চাকরি ক্ষেত্রে দক্ষতা। যা কিনা যে কোনো পদের জন্য উপযোগী কিংবা প্রযোজ্য। যে কোনো কাজ সম্পূর্ন করার জন্য আপনার যা দরকার তা হলো দক্ষতা। সক্ষমতা, পরিদর্শিতা ও জ্ঞান হলো সফট স্কিল বা দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। যা কিনা ভালো চাকরির দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত কেননা সেগুলোতে ক্লায়েন্ট ও সহকর্মী প্রতি আপনার মনোভাব ফুটে উঠে। যা কিনা প্রোডাক্টিভ কাজের অভ্যাস।
প্রতিযোগীতামূলক এই বিশ্বে চাকরি পেতে যে দক্ষতাগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলে ধরবে সেই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. কমিউনিকেশন স্কিল:
কমিউনিকেশন স্কিল একটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ন স্কিল। সহকর্মীদের সাথে স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে কমিউনিকেশন স্কিল থাকা জরুরি। কমিউনিকেশন স্কিল আপনাকে যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করবে। অন্যদের সাথে কাজের ক্ষেত্রে আলাপ আলোচনার জন্য অবশ্যই আপনাকে কমিউনিকেশন অথবা যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। এই দক্ষতা কম্পানিকে যে কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহন করতে সাহায্য করে। যে কোনো নতুন পরিবেশে কমিউনিকেশন করার দক্ষতা আপনাকে অন্যদের কাছে পছন্দনীয় ব্যক্তি করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি কিংবা অন্যান্য ভাষার দক্ষতা থাকলে কমিউনিকেশন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা অর্জন করা যায়।
২. কোঅপারেশন স্কিল:
কর্মক্ষেত্রে সকলের সাথে (যেমন সহকর্মী,ম্যানেজার, ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য ব্যক্তি) সহযোগীতা মূলক ভাবে কাজ করাকে কোঅপারেশন স্কিল বলে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অন্যদের সাথে কাজ করতে হয়। তাই কমিউনিকেশন করার দক্ষতার পাশাপাশি কোঅপারেশন স্কিল থাকাও অত্যন্ত জরুরি। কোঅপারেশন স্কিল শুধু আপনার কাজেন মানকে নয় বরং পাশাপাশি আপনার কম্পানির উৎপাদনশীলতার উন্নতি সাধন করে। কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশ ধরে রাখার জন্য দলগত ভাবে এক অপরকে সাহায্য করার মনোভাব থাকা জরূরি। যে কোনো পরিস্থিতিতে নতুন উদ্ভাবনার জন্য কোঅপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি স্কিল।
৩.প্রবলেম সলভিং স্কিল:
যেকোনো কম্পানির জন্য সৃজনশীলতার সাথে সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচিত। সৃজনশীলতার সাথে সমস্যা সমাধান বলতে মূলত অত্যন্ত জটিল সমস্যার সমাধানকে বোঝায়। যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটার প্রতি আপনার সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা এবং তা সমাধান করার দক্ষতা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে গড়ে তুলে। প্রায় যেকোনো কর্মক্ষেত্রের এটি একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচ্য। যে কোনো প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে এমন লোকের প্রয়োজন যারা নিজ দক্ষতায় যেকোনো সমস্যার সৃজনশীল সমাধান দিয়ে থাকে। তাই চাকরি ক্ষেত্রে প্রবলেম সলভিং স্কিল থাকা অতীব জরুরি।
৪. এডাপটেশন স্কিল:
নতুন পরিবেশে একজন ব্যক্তির মানিয়ে নেওয়াই হলো মূলত এডাপটেশন স্কিল। একজন ব্যক্তি অবস্থার পরিবর্তনে কতটুকু মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারে এটাও একটি দক্ষতা। তাছাড়া সকল নতুন বিষয় আপনি কেমন ভাবে পরিচালনা করছেন এটাও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
৫. ডিসিশন মেকিং স্কিল:
যে কোনো কম্পানিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি কার্যকারী বিষয়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াও একটি বিশেষ দক্ষতা বা সফট স্কিল। একটি সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে একটি কম্পানির উন্নতির জন্য সবচে বড় একটি ধাপ। যেকোনো পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে আপনাকে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা থাকতে হয় এবং এর ফলাফল কি আসতে পারে সে সম্পর্কে একটি স্থিতিশীল ধারনাও থাকা জরুরি। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন নিজের আত্মবিশ্বাসকেও মজবুত করে তুলে। তাই আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে গুরুত্বপূর্ন করে তুলতে আপনাকে হতে হবে একজন সঠিক ডিসিশন মেকার।
৬. লিডারশিপ স্কিল বা নেতৃত্বের দক্ষতা:
আপনি একজন দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে আপনার মাঝে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কর্মজীবনে সফলতা লাভের জন্য নেতৃত্ব দেওয়া দক্ষতা থাকতে হবে। অন্য কর্মচারীদের গাইড করার গুনই মূলত লিডারশিপ স্কিল। লিডারশিপ স্কিল দ্বারা আপনি অন্যকে কাজে অনুপ্রানিত এবং উৎসাহিত করার সুযোগ পাবেন। চাকরি জীবনে ভালো পদ পেতে জীবনের শুরু থেকেই লিডারশিপ স্কিল বা নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা থাকা জরুরি।
৭. টাইম ম্যানেজমেন্ট:
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রই সময় ব্যবস্থাপনা কিংবা টাইম ম্যানেজমেন্ট থাকা অত্যাবশ্যকীয়। সময় আনুবর্তিতা যেকোনো বিষয় সফলতা লাভের সর্ব প্রথম মাধ্যম। কাজ সম্পাদনা থেকে শুরু করে কাজের চাপকে আপনি সময়ের মধ্যে ভাগ করে সম্পূর্ন ভাবে সঠিক সময় শেষ করাও একটি বিশেষ দক্ষতা।
৮. সেলফ অ্যাওয়ারনেস স্কিল বা আত্মসচেতনতা:
নিজের সম্পর্কে অন্য লোকের উপলব্ধি জানা এবং বোঝার ক্ষমতা থাকা জরুরি। আর এই ক্ষমতাই মূলত আত্মসচেতনতা। চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় চাকরি দাতা কিভাবে চাকরি প্রার্থীকে উপলব্ধি করে তা লক্ষ করা অত্যন্ত জরুরি। আর এই উপলব্ধি করার ক্ষমতা হতে পারে আত্মসচেতনতা। চাকরি দাতা চাকরি প্রার্থীর দক্ষতার উপর নজর আরোপ করলে চাকরি দাতা তার দূর্বলতাগুলো কে লক্ষ করবেন । যা দূর করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে আত্মসচেতনতা। একজন আত্মসচেতন ব্যক্তির চাকরি দাতার থেকে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকে বেশি। ফলে তার দূর্বলতাগুলো চাকরি দাতার নজর এড়িয়ে যায়।
৯. শিক্ষাগত যোগ্যতা::
চাকরি পেতে হলে সর্বপ্রথম যেই ধাপটি প্রয়োজন তা হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধু একজন চাকরি প্রার্থী হিসেবে আপনাকে পরিচিত করবে তা নয় বরং এটি আপনাকে সকলের চোখে একজন সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করতে সাহায্য করবে। একটি কর্মস্থলে আপনাকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাই সকলের থেকে আলাদা করবে। আপনার এডুকেশন কোয়ালিফিকেশনের উপর নির্ভর করবে আপনার চারির পদ। যত ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকবে চাকরিতে তত ভালো পদ মিলবে। তাই সমস্ত দক্ষতা থাকার পাশাপাশি ভালো শিক্ষাগত দক্ষতা থাকাও প্রয়োজন।
১০. জেনারেল নলেজ বা সাধারন জ্ঞান:
সাধারণ জ্ঞান হল একটি বিচার করার সার্বজননী জ্ঞান। যা সকলের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে কোনো যুক্তি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। সাধারন জ্ঞান মূলত দৈনন্দিন জীবন থেকে আসে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব কার্যক্রম করে থাকি তার সবটাই এই সাধারন বিদ্যা। চাকরি জীবনে সাধারন জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। কেননা জেনারেল নলেজ ছাড়া সাধারন বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানো যায় না। যা চাকরি নিয়োগকর্তাকে খুব ভালো করে লক্ষ করায়। তাই চাকরি ক্ষেত্রেও সাধারন জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
আজকের উপরের এই আলোচনার দক্ষতাগুলো আপনাকে চাকরি পেতে সাহায্য করার পাশাপাশি আপনার চাকরি জীবনে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। চাকরি জীবনে উন্নতির পাশাপাশি আপনাকে একজন দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেবে। তাই আপনি আপনার জীবনের উন্নয়নের জন্য সর্বদা কিছু না কিছু দক্ষতা অর্জনের পিছনে সময় দিন। উপরের পোস্টটি আপনাকে একজন দক্ষ ব্যক্তির পাশাপাশি একজন সফল মানুষ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত করবে। আপনা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।