ভাই আমার দ্বারা হবে না। এবার হয়তো আমি সত্যিই ফেল করবো। এত গুলো কঠিন বিষয় যদি আমি কোনো রকমে মুখস্তও করে নেই একটু পরে আবার ভুলে যাই। কিচ্ছু হবে না আমার দ্বারা। যখন সমস্যাটা হচ্ছে মনে রাখতে পারা তখন কেননা এর সমাধানটা একজন মেমোরি চেম্পিয়নের কাছ থেকে শেখা যাক। জেসোয়া র্ফোড যিনি কিনা একজন জার্নালিস্ট ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে ৫২ টা কার্ডের এক বান্ডিল তাস মাত্র ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে মেমোরাইজ করে একটা নতুন রের্কডের সাথে ইউ এস মেমোরি চেম্পিয়নশীপ জিতে সফল হয়েছিলেন। আজ আমি আপনাদের সাথে তারই কিছু মেমোরাইজ পদ্ধতি সেয়ার করবো। এতে আপনার পরীক্ষা কঠিন মেমোরাইজিং পদ্ধতির নয় বরং র্স্মাট মেমোরাইজিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে খুব সহজেই আপনি দীর্ঘ দিনের পড়া বা যে কোনো কথা মেমোরাইজ করতে পারেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ১: বেকার/ বেকার:
দুটো মূহুর্ত অনুভব করুন বা চিন্তা করুন যেখানে প্রথমে একটায় আমি আপনাকে কারোর সাথে দেখা করিয়ে পরিচয় করিয়ে বললাম ভাই এনার নাম বেকার। অন্যদিকে আমি আপনাকে অন্য আরেকজনের সাথে আলাপ করিয়ে বললাম ভাই ইনি একজন বেকার মানি বেকারিতে কাজ করে। এবার দুই তিন দিন পর আমি যদি আপনাকে আবার ওই প্রথম লোকটার সাথে দেখা করিয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করি ভাই আপনি এনাকে চিনেন বা জানেন। তখন সম্ভবনা আছে আপনি হয়তো বলবেন এনাকে তো আমি চিনি এবং এনার সাথে আগে দেখাওতো হয়েছিল কিন্তু ভাই এনার নামটাতো ঠিক মনে করতে পারছি না। অপর দিকে দুই তিন দিন পর যদি আমি আপনাকে দ্বিতীয় লোকটার সাথে দেখা করাই আর ঠিক সেই একই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করি যে ভাই এনাকে আপনি চিনেন তাহলে সম্ভবনা আছে আপনি হয়তো বলবেন যে আরে হ্যাঁ এনাকে তো আমি চিনি ইনিতো একজন বেকার অর্থাৎ বেকারিতে কাজ করে। তাহলে এরকম কেন হয় যে একটাই শব্দ বেকার যখন নাম হিসেবে মনে রাখতে হয় তখন আমাদের মনে থাকে না কিন্তু যখন পেশা হিসেবে মনে রাখতে হয় তখন আমাদের মনে থেকে যায়। এর কারন হলো কারোর নাম বেকার শোনার পর আমাদের মাথায় কোনো ছবি তৈরি হয় না। কিন্তু অপর দিকে যখনি আমরা শুনি যে এই লোকটা বেকারিতে কাজ করে তখন আমাদের মাথায় নানা রকম ছবি ভাসতে থাকে। যেমন:পাউরুটি বা বিস্কুটের ছবি। তখন ওই ছবিগুলোর সাথে আমরা ওই লোকটাকে লিংক করে দেই। মানে একটা চক্র তৈরি হয়। যেটাকিনা নামের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়াটা একটু মুসকিল। ঠিক পড়ার ক্ষেত্রেও এরকমই যখন আমরা কিছু এরকম টপিক পড়ি যেখানে চক্র বানানো মুসকিল হয়ে যায় তখন সেই টপিক বা বিষয়গুলোও মনে রাখাও আমাদের জন্য মুসকিল হয়ে যায়। এটাকে সহজ করার জন্য শুধু আমাদের একটু পরিশ্রম করে যতটা সম্ভব আমাদের একটা চক্র বানাতে হবে। যেমন বেকার নামটা শোনার পর আপনি যদি আপনার মনে এমন একটা চিন্তা করেন যে ছোট কালে হয়তো এই লোকটা অনেক পাউরুটি খেতে ভালোবাসতো তাই হয়তো এনার বাবা মা এনার নাম বেকার রেখে দিয়েছেন। এতে কি হবে ওই মানুষটার নামের সাথে একটা ইমোশনাল চক্র তৈরি হবে। যার ফলে ওই মানুষটাকে দেখলেই আপনার এই গল্পটা মনে পরে যাবে এবং আপনি খুব সহজেই এই মানুষটাকে মনে রাখতে বা মেমোরাইজ করতে পারবেন।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ২: চানকিং বা কদর্য:
যদি আমার এখনি খুব তাড়াতাড়ি ২০০৬১৯৯৬০৮০২২০১৭ এই সংখ্যা গুলো মনে করতে হয় তাহলে আমার জন্য এই বিষয়টা খুব মুসকিল হয়ে যাবে। বেশ কিছুক্ষন সময় লাগবে। কিন্তু এই সংখ্যাগুলো যদি আমি চানক বানিয়ে অর্থাৎ ভেঙে ভেঙে ২০/০৬/১৯৯৬ এবং ০৮/০২/২০১৭ এভাবে মনে রাখার চেষ্টা করি তাহলে এই সংখ্যাগুলো খুব সহজেই মনে থেকে যাবে। যেমন এর মধ্যে প্রথম তারিখ টা হলো আমার নিজের জন্মদিন এবং পরেরটা হলো আমার প্রথম ওয়েবসাইট পেজটার জন্ম দিন। দেখুন কত সহজে এই ষোলোটা সংখ্যা আমার এক মূহুর্তেই মুখুস্ত হয়ে গেল। এরকমই যদি আমি আপনাকে বলি TYEOLUIEUBVO এই উলটপালট অ্যালফাবেট গুলো মনে রাখতে যদিও পরপর মনে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই তোবুও আপনি কি মনে রাখতে পারবেন? আমার মনে হয় পারবেন না। কিন্তু যদি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন যে এই অ্যালফাবেটগুলোর কাম্বিনেসন হলো I LOVE YOUTUBE । এবার বলুন যে এইবার এই অ্যালফাবেটগুলো আপনি মনে রাখতে পারবেন? অবশ্যই আপনার উত্তর হ্যাঁ।
র্স্মাট আইডিয়া নম্বর ৩:স্মৃতির প্রাসাদ:
বিভিন্ন ধরনের লম্বা লম্বা লিস্ট আমাদের বিভিন্ন ভাবে মনে রাখতে হয়। সেটা যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রে তা নয়। যেমন : সপিং এর সময় , কোনো বক্তৃতা দেওয়ার সময়, কোনো উপস্থাপনের সময়। তাহলে এত লম্বা লিস্ট আপনি কি করে মনে রাখবেন? এ রকম সময় স্মৃতির প্রাসাদ টেকনিক সবথেকে বেশি কাজে আসে। আপনাকে একটা জায়গা ভাবতে বা চিন্তা করতে হবে যার কোনায় কোনায় আপনি খুব ভালো চিনেন। হতে পারে আপনি ছোটবেলায় যেই বাড়িটায় থাকতেন সেই বাড়িটা। এখন আমি আপনাদের সাথে যেই গল্পটা বলছি সেটকে কল্পনা করার চেষ্টা করুন। এক দিন আপনি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ফেরার সময় লাস্ট মোরটাতে আপনি দেখলেন যে দুজন বড় বড় লোক আর কিছু না শুধু বাচ্চাদের হাফপেন্ট পড়ে হাসতে হাসতে আপনার পাস দিয়ে চলে গেল।আপনার এটা দেখে ভিষন অদ্ভুদ লাগলো। তাড়পড় আপনি যখন বাড়ির দরজার কাছে এসে পৌছালেন তখন আপনি দেখতে পেলেন দুটি বড় বড় সাইজের টমেটো কেও আপনার দরজায় ছুড়ে মেরেছে। এখনো ওই টমেটো গুলোর কিছু অংশ দরজায় লেগে রয়েছে। আপনি ভাবলেন এটা নিশ্চই ওই হাফপেন্ট পড়া মানুষ দুটির কাজ। আপনি রেগে তাড়াহুড়ো করে দরজা খুললেন আর দরজা খুলতেই আপনি দেখলেন যে আপনার সোফাতে বসে দিপিকা এক ডজন কলা খাচ্ছে। এবার এটা অনেকের কাছে ভিষন অদ্ভুৎ লাগতে পারে। কিন্তু জিনিস যত বেশি অদ্ভুৎ হবে আপনার ব্রেইন সেটাাক তত সহজে মনে রাখতে পারবে। এরপর আপনি ভাবলেন ভাই কি হচ্ছে এই সব। আর আপনি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গেলেন আর আপনি দেখলেন যে প্রতিটা সিড়িতে কে যেনো একটা করে রসগোল্লা ফেলে রেখেছে। আর সিড়ি দিয়ে চলার সময় ওই রসগোল্লার রস এসে আপনার পায়ে লেগে গিয়েছে। তো উপরে উঠেই পা ধোয়ার জন্য আপনি সোজা বাথরুমে গেলেন এবং পা ধুয়ে নিলেন। তাড়পড় আপনি পা মোছার জন্য একটা তাওয়াল খুজতে লাগলেন কিন্তু সেই তাওয়াল খুজতে গিয়ে আপনি দেখলেন যে আপনার স্ত্রী সেই তাওয়াল পরেই রান্না করছে। আর এটা দেখে আপনার ভিষন রাগ হচ্ছে যে এত কিসের তাড়া যে তাওয়াল পরেই রান্না করতে হবে। এরপর আপনি রাগ কমাতে ফ্রিজ থেকে একটা পেপসি বের করে খেতে শুরু করলেন। এবার এই গল্পটার মধ্যে যেই উপকরন গুলো রয়েছে সেগুলোর মনে মনে একটা লিস্ট তৈরি করুন । আর কমেন্ট করে আমাকে জানান যে কার কয়টা উপকেরনের কথা মনে রয়েছে। আর এই ভাবেই গল্পের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই আপনার এই লিস্টের উপকরন গলোর কথা খুব সহজেই মনে থাকবে। যা কিনা স্মৃতির প্রাসাদ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার একটা বিষয় শুনতে হয়তো অদ্ভুৎ লাগতে পারে কিন্তু এই সব টেকনিক গুলো আরাই হাজার বছর আগে গ্রিসে আবিষ্কার করা হয়েছিল। কেনো না তখন কোনো লেখার উপায় ছিল না তাই তখনকার লোকেরা হিউমেন মেমোরির উপর নির্ভর করতো। কিন্তু আজ আধুনিক টেকনোলজির জন্য আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই নিজের হিউমেন মেমোরি পাওয়ারের উপর এত টুকুও মনোযোগ দেয় না। মেমোরি পাওয়ার তো শুধু পরিক্ষাতে ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য লাগে না বরং বিভিন্ন বিষয়ে কাজে লাগে। ইনফেক্ট আমরা যেটাই তৈরি হয়েছি সেটা পুরোপুরি আমাদের মেমোরি পাওয়ারের জন্য। এখন যদি আপনার মেমোরি থেকে পুরোপুরি সব কিছু মুছে দেওয়া হয় তাহলে আপনি একে বারেই জানবেন না যে এটা আপনার বডি নাকি অন্য কারো। মেমোরি আমাদের জিবনের সব কিছুকে পের্যালোচনা করে। একটা ভালো মেমোরি পাওয়ারের সাথে আমরা একটা ভালো জীবন কাটাতে পাড়ি। তাই অবশ্যই আমাদের সবার আগে একটা ভালো মেমোরি বানানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে করে খুব সহজেই যেকোনো বিষয় আমরা দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারবো এবং যেকোনো বিষয় সহজেই মুখুস্ত করতে পারবো।