চোখ উঠা একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি একটি ছোয়াচে রোগ। প্রায় প্রতিটি মানুষেরই চোখ উঠার মত সমস্যা দেখা যায়। আর কখোনই চোখ উঠে নি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। দেশে কিংবা বিদেশে চোখ উঠার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিবার কিংবা যদি পরিচিত মুখের কারো চোখ উঠে তাহলে একে একে সকলেরই চোখ উঠতে দেখা যায়। এমন একটি ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে আক্রান্ত রোগীর চোখের দিকে তাকালেই কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হবে। এমনটি একেবারেই নয়। আক্রান্ত রোগীর দিকে তাকালেই এই রোগ হয় না। যে কোনো বয়সের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শীত কালীন সময়ে এই রোগের প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায়। চোখ উঠলে বিশেষ চিন্তার কোনো কারন নেই। চোখ উঠার চার থেকে পাচঁ দিনের মধ্যেই এই রোগ সেরে যায়। তবে অবশ্যই বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে এবং চোখের যত্ন নিতে হবে।
চোখ ওঠা কী?
চোখের কনজাংটিভা অথবা সাদা অংশটি লাল হয়ে যাওয়া,চোখ খচখচ করা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কনজাংটিভাতে অস্বস্তিকর ব্যথা হলে তখন তাকে চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস বলে। এটি প্রথমে রোগীর যে কোনো এক চোখে হয় এবং পরে অপর চোখেও ছড়িয়ে পরে। তাই চোখ উঠার পর সময় মত চিকিৎসা না নিলে হতে পারে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
চোখ ওঠা রোগ কেন হয়?
১)অ্যালার্জির কারনে চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।
২) মৌসুমি বাতাসে অর্থাৎ শীতকালীনি সময়ে এই রোগ হতে পারে।
৩) ধলাবালির কারনে এই রোগ হতে পারে।
৪) ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জনিত কারনে এই রোগ হতে পারে।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষন:
১) চোখ প্রচুর পরিমানে ব্যথা করা।
২) চোখে কনজাংটিভা বা সাদা যায়গা টুকু লাল হয়ে যাওয়া।
৩) চোখের উপরের ও নিচের পাতা ফুলে যাওয়া।
৪) চোখ থেকে অনবরত পানি পরা।
৫) চোখ খচ খচ করা।
৬) আলোতে চোখে অস্বস্তি বোধ করা।
৭) চোখে ঝাপসা দেখা।
৮) ঘুম থেকে উঠার পর চোখ মেলতে সমস্যা হওয়া।
৯) চোখে অতিরিক্ত কেতুর বা ময়লা জমা।
১০) চোখ জ্বালাপোড়া করা ও চোখ চুলকানো।
চোখ ওঠা রোগ ছড়ানোর কারন:
১) চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস একটি ছোয়াচে বা ভাইরাস জনিত ইনফেকশন। তাই এটি আক্রন্ত ব্যাক্তির যে কোনো জিনিস ব্যবহারের ফলে ছড়াতে পারে। যেমন: আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে, আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে বা গামছা ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে।
২) অ্যালার্জি জনিত রোগের কারনে বা ধুলা বালির কারনে এই ছড়ায়।
৩) আক্রান্ত ব্যক্তি বিছানা বা মুঠোফোন ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
৪) চোখে অতিমাত্রায় কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা বা প্রতিকার:
১) চোখে কালো চশমা পরতে হবে।
২) হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা যাবে না।
৩) চোখ পরিষ্কারের জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
৪) কিছুদিন রোগীর জিনিসপত্র এবং রোগীকে আলাদা থাকতে হবে। যেন অন্যদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে না পড়তে পারে।
৫) হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে।
৬) যথা সম্ভব চোখ খোলা রাখতে হবে।
৭) পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম গ্রহন করতে হবে।
৮) প্রচুর পরিমানে ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
৯) চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ও ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো প্রকার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতিত কোন ধরনের স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করা নিশিদ্ধ।
১০) রোগীকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
১) চোখে অতিরিক্ত ঝাপসা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
২) বেশি পরিমানে কেতুর বা হলুদ রঙের ময়লা গেলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
৩) চোখের কনজাংটিভা বা সাদা অংশ ফুলে গেলে চিকিৎশকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪) যদি রোগীর চোখ থেকে রক্ত পরে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫) চোখের সাদা অংশে যদি পানি জমে তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬) শিশুদের ক্ষেত্রে সর্বদাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
৭) আলোতে গেলে বা রোদে গেলে যদি চোখে সমস্যা বেশি হয় তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮) চোখে অতিমাত্রায় ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৯) সাত দিনের মধ্যে এই রোগ ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১০) চোখে কোনো প্রকার ড্রপ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসংহার :
দেশে চোখ উঠার মত সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভাইরাস জনিত বা ছোয়াচে হওয়ার কারনে এই রোগের প্রভাব আরো বেশি করে লক্ষ করা যায়। ভারতে এই চোখ ওঠা রোগ কে জয় বাংলা রোগ বলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালে এটি পশ্চিমবঙ্গে মহামারির রূপ ধারন করেছিল। সে সময় ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। পূর্ব বাংলায় চলমান যুদ্ধের ফলে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিম বাংলায় পৌছেছিল বলে এই চোখ ওঠাকে ভারতে জয় বাংলা বলে অভিহীত করে। চোখ ওঠা একটি খুবই সাধারন রোগ। এটি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বা ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। সাধারণত এ রোগ একাই ভালো হয়ে যায়। তাই ভয় না পেয়ে উপরের কার্যক্রমগুলো মেনে চলুন।