আপনজনদের দেওয়া কষ্টগুলো ভুলে কিভাবে নিজেকে একটা শক্ত মানুষ তৈরি করা যায়। পান্না আক্তার এই বিবেচ্য সমস্যার সমাধান জানতে চেয়েছেন। এই জিবন সমস্যার সমাধান থেকে পান্না নামের একটি মেয়ের মেনটালি উইক পারসোন থেকে মেনটালি স্ট্রং পারসোন হয়ে ওঠার গল্প শোনাবো।তো চলুন শুরু করা যাক-
এবারের নববর্ষে পান্নার সব বন্ধুরা মিলে ঠিক করলো ওরা একটা রেস্টুরেন্টে একসাথে খেতে যাবে। সেজেগুজে যখন পান্না তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেল তখন ওর সবথেকে প্রিয় বন্ধুটাই সবার সামনে মজার ছলে ওকে বলে উঠল “এটা কি পড়েছিস? আজকের দিনটাতে অন্তত একটু কিছু ভালো পেলি না পড়ার?” কথাটা যদিও মজার ছলে বলেছিল কিন্তু সেই একটা কথা পান্নার পুরো নববর্ষের দিনটাই মাটি করে দিল।এরকম যে কারোর একটা সামান্য কথাতেই পান্না ভিসন ভাবে ভেঙে পড়ত। অন্যদিকে প্রতিবার পরীর এক সপ্তাহ আগে থেকেই চিন্তায় পান্নার ঘুম শেষ হয়ে যেত। এমনকি শরীর ও খারাপ হয়ে যেত। জীবনে এরকম যেকোনো চেলেন্জের মুখে পরলেই পান্না বুঝতে পারত যে ও ঠিক মানসিক ভাবে কতটা দুর্বল। এমকি দুর্বলতার কথা কারো সাথে সেয়ার করার মত মানসিক শক্তিটাও পান্নার হতো না। একদিন এমনি একটা কারনে মন খারাপ পান্না ওর মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইউটিউব ঘাটতে ঘাটতে একটা ভিডিও দেখতে শুরু করে। আর সেই ভিডিওতে বলা একটা কথা পান্নার খুব মনে ধরে যায়। কথাটা ছিল “আমরা রোজ আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য কি করি? পান্না ঠিক করে আজ থেকেই সে তার মানসিক সুস্থতার দিকে শারীরিক সুস্থতার থেকে বেশি গুরুত্ব দিবে।যাতে সে শারীরিক এর থেকে মানসিক ভাবে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তারপর সে মাথা খাটাতে শুরু করে। পান্না ভেবে দেখল যে আমরা শারীরিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠার জন্য ঠিক কি কি করি।
১)ইমউনিটি বাড়ানোর জন্য জাঙ্কফুড কে না বলি। তার বদলে সাস্থকর খাবার খাই।
২)স্ট্রেন্থ বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন কোন না কোন এক্সারসাইজ করি। তা জিম এ গিয়ে হোক কিংবা বাড়িতে হোক।
৩)স্টামিনা বাড়ানোর জন্য দৌড়ানো ,দড়িলাফ খেলা বা অন্য যেকোনো রকম কারডিও এক্যারসাইজ করি। তো এই রকম একই ভাবে আমি যদি মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে চাই তাহলে আমাকে কি কি করতে হবে।
১)Thought-:শরীরকে যেমন পুষ্টি যোগায় খাবার তেমনি আমাদের মনকে পুষ্টি যোগায় Thought. নেগেটিভ Thought জাঙ্কফুড এর মত। আর পজেটিভ Thought হেলদি ফুড এর মত আমাদের মনের উপর কাজ করে। তাই মনকে শক্তিশালী করে তুলতে বেশি বেশি পজেটিভ Thought নিতে হবে।
২)Meditation-:শরীরের স্ট্রেন্থ বাড়ানোর জন্য যেমন আমরা এক্সারসাইজ করি তেমনি মনের স্ট্রেন্থ বাড়ানোর উপায় হলো Meditation.জিম এ গিয়ে যত আমরা ভারি ভারি জিনিস তোলার অভ্যাস করি তত আমাদের স্ট্রেন্থ বাড়ে। ঠিক তেমনি Meditation এ বসে যত আমাদের ভয়গুলোকে মনের মধ্যে চলতে থাকা ভারি ভারি অস্যস্থি তগুলোকে খুজে বেড় করে সেগুলোর সমাধান বেড় করার চেষ্টা করি সেগুলো তত আমাদের মেনটাল স্ট্রেন্থ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩)নতুন কিছু শেখা-:শরীরের স্টামিনা বাড়ানোর জন্য যেমন আমরা দৌড়,দড়িলাফের মত এক্সারসাইজ করে থাকি ঠিক তেমনি মনের স্টামিনা বাড়ানোর জন্য দরকার নতুন কিছু শেখা। কারডিে এক্সারসাইজ এর দ্বারা আমরা যত বেশি আমাদের হৃদপিন্ডটাকে খাটাই তত বেশি আমাদের স্টামিনা বাড়ে। ঠিক তেমনি নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে যত বেশি আমাদের মাথা খাটাই তত বেশি আমাদের মনের স্টামিনা বাড়ে।
এই ফরমুলাটা পরিষ্কার ভাবে বুঝে যাওয়ার পর পান্না কি করল?
১)মনে যেনো নেগেটিভ থট কম আর পজেটিভ থট বেশি আসে সে দিকে লক্ষ করলো। আর রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে যেকোনো একটি বই পড়ত।দেখতে দেখতে এক মাসের মধ্যেই পান্না তিনটি বই শেষ করে ফেলল।আর এই বই শেষ করতেই পান্না নিজেকে ইমশোনালি স্ট্রং দেখে নিজের পরির্বতন দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে গেল।
২)মনের স্ট্রেন্থ বাড়ানোর জন্য পান্না প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১০মিনিটের জন্য Meditation এ বসে থাকাটা একটি রুটিন এর মত বানিয়ে ফেলল। এই ১০মিনিট পান্না সে দিন ওর সাথে খারাপ কি কি হয়েছে মনে করত।আর সেই একই কাজ যদি আবার কোনোদিন ওর সাথে ঘটে তাহলে নিরভয়ে ওইগুলো সমাধান করতে পারত।আর তার পর সেদিন ওর সাথে ভালো কি কি হয়েছে সেগুলোকে মনে করে। আর সেগুলোর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যানিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে যেতে শুরু করল।
৩)মনের স্টামিনা বাড়ানোর জন্য পান্না ১২ মাসে নতুন নতুন স্কিল শিখার একটা লিস্ট তৈরি করল।যেগুলো ছিল কির্বোডের দিকে না তাকিয়ে ১০ টা আঙ্গুল দিয়ে টাইপিং করা শেখা। কারন সে যানত আজকের এই কম্পিউটারের যুগে সে যাই করুক না কেন অবশ্যই ভিশন ভাবে প্রতিদিন কাজে আসবে। ২ মাসে গিটার বাজানো শিখানো। কারন বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেওয়ার সময় একটা গিটার থাকলে আড্ডা জমে যায়। ৩ মাসে রান্না করা শেখা। কারন এই স্কিল টাও জীবনে কখনও না কখন কাজে আসবে। ৪র্থ মাসে দাবা খেলা শেখা।এভাবে পান্না পুরো ১২ মাসের লিস্ট তৈরি করে ফেলে এক এক করে সবগুলো শিখতে শুরু করল। এভাবে রোজ নতুন কিছু শেখার মাথা খাটানোর ফলে পান্নার মেনটাল স্টামিনা তো বাড়লোই তার সাথে সাথে এই ভাবে নতুন স্কিল শিখতে পেড়ে পান্নার মধ্যে নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়ে উঠল।যা পান্নাকে মানসিক ভাবে ওনেক শক্তির যোগার করল।
আর এই ভাবেই পান্না অল্প দিনেই মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠল। এখন না কারো মজার ছলে বলা কথা আর নাই বা পরিক্ষার দুশ্চিন্তা। কিছুই এত সহজে পান্নাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলতে পাড়ে না। আর এই ভাবেই পান্না Mentally weak person থেকে Mentally strong person হয় উঠল।
সবসময় মনে রাখবেন যদি আপনি শক্তিশালী ভাবে জীবনজাপন করতে চান তাহলে সবার আগে আপনার মনকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।