ডায়াবেটিস কি ডায়াবেটিস কেন হয় এবং এর লক্ষন কী কী ডায়াবেটিস প্রতিকারের উপায় কী

ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস কেন হয় এবং এর লক্ষন কী কী? ডায়াবেটিস প্রতিকারের উপায় কী?

Health

ডায়াবেটিস:

ডায়াবেটিস শব্দটি সকলের কাছে খুব একটা অপরিচিত নয়। পৃথীবিতে ডায়াবেটিস নেই এমন পরিবার খুজে পাওয়া মুশকিল। দিনে দিনে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশের ১১ .৪ শতাংশ লোক ডায়াবেটিসে ভুগছে যা কিনা ভবিষ্যতে ১৫.৩ শতাংশে পৌছাতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে এটি মহামারির মত ছড়িয়ে পরতে পারে। তাই এটি নিয়ন্ত্রনে চিকিৎসকরা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।

ডায়াবেটিস কি?

এটি মূলত এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। আর ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন যা মানব দেহের শর্করাজাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রনের কাজ করে। আমরা যে খাদ্য গ্রহন করি আমদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে গ্লুকোজে বা চিনিতে পরিনত করে। ইনসুলিন নামের এই হরমোনের কাজ হলো মানবদেহের কোষগুলোতে এই গ্লুকোজ বা চিনিকে পৌছাতে সাহাজ্য করা। যখন মানব দেহে এই ইনসুলিন হরমোন নিজে নিজে তৈরি করতে না পারে বা এর কার্যকারিতা ঠিক ভাবে না হয় তখন রক্তে চিনির পরিমান বেশি হয়। আর শরীরের এই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে চিহ্নিত করা হয়।

ডায়াবেটিস কেন হয়?  

১) কোলেস্টেরল  এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ডায়াবেটিস এর ঝুকি বেড়ে যায়।

২) ডায়াবেটিস প্রতিকার সম্পর্কে শিক্ষার অভাবের কারনে ডায়াবেটিস এর ঝুকি বেড়ে যায়।

৩) বংশগত কারনে যাঁদের পরিবারের ইতিহাসে ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি থাকে।

৪) গোটা শস্য,ফল, শুকনো ফল ও বীজ না খাওয়া বা পরিমানে কম খাওয়া।

৫) মদ্যপান ও ধূমপান যাঁরা করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬) প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭) তেল এবং চর্বি, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় জিনিসের অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস হয়। 

৮) ব্যায়াম না করার কারনে ডায়াবেটিস হতে পারে।

৯)পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম রোগীদের ডায়াবেটিস হতে পারে। 

১০) অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার  কারনে ডায়াবেটিস হতে পারে।

১১) স্থূলতার কারনেও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১২) অতিরিক্ত মোবাইল , কম্পিউটার ও টিভির স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানোর ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। 

১৩) হৃদরোগ আক্রান্ত বা স্ট্রোকের কোন ইতিহাস থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে।

১৪) ৪৫ বছর বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

১৫) অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে। 

ডায়াবেটিসের লক্ষন:

১) কোন কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন কমে যাওয়া।

২) অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা বা অনুভব করা।

৩) খাবার খেয়েও ক্ষুদা না মেটা।

৪) ক্ষতস্থান সারতে সময় লাগা।

৫) হঠাৎ মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা হওয়া।

৬) ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবনতা বেড়ে যাওয়া। 

৭) তীব্র তৃষ্ণা বা পিপাসা লাগা।

৮) মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা ।

৯) মূত্রনালীতে সংক্রমণ ও চুলকানের সমস্যা হওয়া। 

১০) ত্বকের সংক্রমণ। যেমন: চামড়া ফেটে যাওয়া বা শুষ্ক ত্বক। 

ডায়াবেটিসের প্রতিকার করার উপায়:

১) যাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে।

২) বংশের কারো যদি ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

৩) কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্ত চাপ যেন না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

৪)মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫) দৈনিক নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৬) অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৭) অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ নেয়া যাবে না।

৮)  অতিরিক্ত মোবাইল , কম্পিউটার ও টিভি দেখা যাবে না।

৯) তেল এবং চর্বি, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওযা থেকে বিরত থাকতে হবে।

১০) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, পিপাসা লাগা, অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা এবং ক্ষতস্থান দেরিতে সারা এমন লক্ষন দেখলে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা। 

ডায়াবেটিস হলে করনীয় কী?

১) ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

২) ডায়াবেটিস ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করা।

৩) ডায়াবেটিস ওষুধ মুখে সেবন করা।

৪) নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা।

৫) সকালে এবং বিকেলে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাশ করা।

৬) বাসায় গ্লুকোমিটার রেখে নিয়মিত ডায়াবেটিস মাপতে হবে।

ডায়াবেটিস হলে কী কী খাবেন?

১) ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কামরাঙা , পেঁপে, নাশপাতি, অ্যাভোকাডো, কমলা ইত্যাদি। 

২) রাতে রুটি খাওয়াই শ্রেয়।

৩) প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি গ্রহন করতে হবে।

ডায়াবেটিস হলে কী কী খাবেন না?

১) তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।  

২) চা বা কফি খাওয়া থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। 

৩) দুগ্ধজাত জাতীয় খাবার খাওয়া বর্জন করতে হবে। 

৪) খাবেরর মধ্যে শর্করার পরিমান থাকলে তা পরিহার করতে হবে।

৫) অতিরিক্ত লবন খাওয়া যাবে না।

৬) ফ্যাট-যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। 

৭) আলু,ভাত ও গাজরে শর্করার পরিমান বেশি থাকায় এগুলো যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। 

৮) তামাক জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *